সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য

আবারও দুদকের জালে এমপি সালাউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনে মিথ্যা হলফনামা দেওয়ায় জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও ময়মনসিংহ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি আবারও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে জড়িয়েছেন। তার বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নিতে দুদক গতকাল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। এর আগে তার দুই মেয়ের ‘রাজকীয়’ বিয়ে নিয়ে দুদক অনুসন্ধান চালায়। সর্বশেষ দুদক সচিব ড. মো. শামসুল অরেফিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতে তিনি ১ লাখ টাকার স্থাবর ও সাড়ে ৩ লাখ টাকার অস্থাবরসহ সাড়ে ৪ লাখ টাকার সম্পত্তির বিবরণ দেখিয়েছেন। অথচ এর আগে তিনি ২০১৩ সালের ৩০ জুন তার আয়কর বিবরণীতে উপ-কর কমিশনার (মুক্তাগাছা)-এর দফতরে ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৮৭৬ টাকার সম্পদের বিবরণী দাখিল করেন। এ ছাড়াও দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনি তার বাবার কাছ থেকে ৩ লাখ ৩ হাজার টাকার সম্পত্তি হেবা দলিলের মাধ্যমে মালিকানা অর্জন করেছেন। তিনি হেবা সম্পদের বিবরণ নির্বাচন কমিশন ও আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেননি। সব মিলিয়ে এমপি সালাউদ্দিন ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮০০ টাকার সম্পদ কম দেখিয়ে মিথ্যা হলফনামা দাখিল করেছেন। চিঠিতে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক থেকে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। কমিশনে উপস্থাপন করব।’ ইসির কর্মকর্তারা জানান, সম্পদের বিষয়ে হলফনামায় এই এমপির অসত্য তথ্য দেওয়ার বিষয়ে এ মুহূর্তে ইসির করণীয় কিছু নেই। আগেও কয়েকজন এমপির বিষয়ে কমিশনের কাছে দুদক এ ধরনের চিঠি দিয়েছিল। বিষয়টি দুদক তদন্ত করে প্রয়োজন হলে মামলা করবে। আদালতের বিষয় শেষ করে এরপর সাজা হলেই কমিশনের করণীয় কিছু থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, এর আগে এক দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে মেয়ের বিয়েতে বিপুল আয়োজনের পর ‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগের মুখে পড়েন সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি। তার সম্পদের হিসাব চেয়ে গত ৩০ অক্টোবর নোটিস পাঠায় দুদক। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, অনুসন্ধানে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ তথ্য উঠে আসে এমপি সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। এর আগে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদ মাঠে এই সংসদ সদস্যের দুই মেয়ের ‘রাজকীয় বিয়ে’ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক ও দুদকের একজন উপ-সহকারী পরিচালকের সঙ্গে দুই মেয়ের বিয়ে দেন। সংবাদমাধ্যমের খবরে আরও বলা হয়, সংসদ সদস্য দুই মেয়ের বিয়ের আয়োজনে প্রায় ১৫ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জবাই করা হয়েছিল ২০টি গরু ও ৫০০ ছাগল। পুরো আয়োজনে খরচ হয়েছিল কোটি টাকা। সংসদ সদস্যের বড় মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও ছোট মেয়ের বয়স নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে দুদকের ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল বলে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই বিয়ের পরের মাসে সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তত্ত্বাবধানে উপ-পরিচালক শেখ আবদুস সালাম এ অনুসন্ধান করেন।

সর্বশেষ খবর