সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনদের আহাজারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন গুম হওয়া ৩৫ জনের পরিবারের সদস্যরা। তাদের কান্না, আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জের পরিবেশ। গতকাল সকালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে প্রেস ক্লাবে ‘মায়ের ডাক-সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক সি আর আবরারসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় মানবাধিকার সমিতির মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা। গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন, বড় বোন আঁখি, ছোট বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের মেয়ে রিদিসহ অন্যরা তাদের স্বজনদের সন্ধান দাবিতে বক্তব্য রাখেন। নিখোঁজ হওয়া সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, আমরা যেন সন্তানের মুখ দেখে মারা যেতে পারি। আমার ছেলেকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই। সুমনের বোন আঁখি বলেন, ‘গুম হওয়া সুমনের বোন’ পরিচয় আমি আর বহন করতে চাই না। প্রশাসনের সব স্তরে গিয়েও আমি ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাইনি। আমার ভাইকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, যাদের করের টাকায় সরকার চলছে তাদেরই গুম করে দেওয়া হচ্ছে। এমনটা প্রত্যাশাও নয়, মেনেও নেওয়া যায় না। আমরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরে পেতে চাই। গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের মেয়ে রিদি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, আমি আমার বাবার কাছে যেতে চাই। বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি ছিল তার কণ্ঠে। এ সময় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি নিজেই গুমের শিকার হয়েছিলাম। গুম নিয়ে এসব কথা এতবার বলার পরেও গুম হওয়া ব্যক্তিদের কোনো সন্ধান দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, গত ছয় মাসে ৫২ জন গুম হয়েছে, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৮৭ জন। আর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ১২৬টি। নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান দাবিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সন্ধান দাবি করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগই নেয়নি। আর অভিযোগ নিলেও সেগুলোর তদন্তকাজ এগোয়নি। গণমাধ্যমে এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও পুলিশ পাত্তা দেয় না। মান্না আরও বলেন, গুম হওয়া স্বজনদের কান্না সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে, তাহলে যদি সরকার তাদের সন্ধান দেয়। তিনি বলেন, মারা গেলে মানুষের জানাজা করা যায়, দোয়া করা যায়, কিন্তু যারা বছরের পর বছর নিখোঁজ রয়েছে, গুম হয়েছে তাদের স্বজনরা তো কিছুই করতে পারছে না। তাদের সান্ত্বনা পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে একের পর এক গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে। বিচার বিভাগের নিষ্ক্রিয়তাও এর জন্য দায়ী। আমি ফরহাদ মজহারের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছি। পুলিশ, র‌্যাব সক্রিয় না থাকলে হয়তো তার মৃতদেহ পাওয়া যেত। তিনি বলেন, এসব বন্ধ না হলে মুক্তিযুদ্ধ অর্থহীন হয়ে যাবে। বর্তমান গুমের সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তুলে নিয়ে গুম করে দেওয়ার কোনো পার্থক্য নেই। অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, আমরা ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যেই বাস করছি। গুম হওয়া মানুষের স্বজনরা সন্ধানের জন্য যে দাবি করেছেন সেগুলো তো একেবারেই ন্যূনতম। বছরের পর বছর তাদের পরিবারের মানুষের স্বজনদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এর জবাব চাই। রাষ্ট্রের কী এ ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নেই? এসবের দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।

সর্বশেষ খবর