মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই বছরে কাজ শেষ ৫২ শতাংশ

পদ্মা সেতু

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

দুই বছরে কাজ শেষ ৫২ শতাংশ

পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের দুই বছর পূর্তি আজ। নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৫ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল কাজের শুভসূচনা করেন। এদিন থেকেই একটি নবদিগন্তের সূচনা হয়। ইতিমধ্যে সেতুটির ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ১৫০ মিটার একটি স্প্যানও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এখন পদ্মা সেতু বাস্তবেই মানুষ চোখে দেখতে পান। প্রস্তুত রয়েছে আরও ৩টি স্প্যান। গতকাল পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৫২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের। পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ। একদিকে নদী শাসন, অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ কাজ, অন্যদিকে সেতুর টোল প্লাজা সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনার সর্বশেষ কাজ দেখে মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছেন। ২০০১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ার পদ্মাপাড়ের মত্স্য আড়তের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সরকার পরিবর্তনের পাশাপাশি থেমে যায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ। চারদলীয় জোট সরকার ও সেনা শাসিত ফখরুদ্দীনের সরকার এ নিয়ে আর কাজ করেনি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠনের পর আবারও পদ্মা সেতু নিয়ে তত্পরতা শুরু করে। শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কাজ। চুক্তি হয় বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকাসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের কারণে মাঝপথে থেমে যায় পদ্মা সেতুর কাজ। এরই মধ্যে কেটে যায় ১৪টি বছর। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে পদ্মা সেতুর মূল কাজ উদ্বোধন করেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। বর্তমানে প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ হয়েছে শতভাগ। চলছে ৩৯, ৪০, ৪১ নম্বর পিলারের কাজ। অল্পদিনের মধ্যেই এসব পিলারে বসবে স্প্যান। এদিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে এ এলাকায় চলছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। পদ্মা সেতুর পাইলিং চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাইড্রোলিক হ্যামারের সাহায্যে। তৈরি হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক, চলছে নদী শাসনের কাজ, ওয়ার্কশপে স্প্যানসহ সেতুর নানা সরঞ্জাম প্রস্তুত, আবার কোথাওবা তীর থেকে ক্রেনের সাহায্যে জাহাজে মালামাল উঠানোর কাজ চলছে। দেখলেই বুঝা যায়, পদ্মা সেতুর কাজ চলছে পুরোদমে। ৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। ১৫০ মিটারের ৪১টি স্প্যান বসানো হবে এতে। এ ছাড়াও সেতুর দুই পাড়ে ১২টি করে আরও ২৪টি পিলার থাকছে। সর্বমোট ৬৬টি পিলার থাকছে পদ্মা সেতুতে। এ ছাড়াও মূল সেতুর ৪০টি পিলারে ৬টি করে ২৪০ এবং দুই পাড়ের দুটিতে ১২টি করে ২৪টি অর্থাৎ ২৬৪টি পাইল বসানো হচ্ছে।

 

পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের বাংলাদেশি কান্ট্রি প্রধান মি. রেম ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণ কাজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দেশি-বিদেশি লোকবল কাজ করছে। এদের মধ্যে ৫০০ চীনা নাগরিক ও ৩ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তা বিশাল এই নির্মাণযজ্ঞে কাজ করছে। সার্বিক কাজে আছে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড সেতু কাজের তদারকি করছেন। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ১১০০ হেক্টরেরও অধিক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ এখন মাওয়া ও জাজিরা এবং এর আশপাশের গোটা এলাকা ছাড়াও পদ্মার বুকে। পদ্মা এখন অনেকটা শান্ত, তাই নদীতে ভাসমান বড় বড় ক্রেন কাজ করে চলছে নির্বিঘ্নে। বড় আকারের ড্রেজারগুলোও তাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করছে। চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর হাইড্রোলিক হ্যামারের পাইলিং কাজ। তাই পদ্মার যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ চোখে পড়ে। স্বপ্নের এই সেতু বাস্তবায়নের পথে যেতে দেখে এই অঞ্চলের মানুষ বেশ খুশি।

সর্বশেষ খবর