বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পোস্টারে ঢেকে গেছে শোক

রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমি

মোস্তফা কাজল

পোস্টারে ঢেকে গেছে শোক

রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকা দখল করে নিয়েছে রাজনৈতিক দলের পোস্টার ও ব্যানার। এলাকার উঁচু ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সড়কের দুই পাশে শোভা পাচ্ছে শ শ ব্যানার ও পোস্টার। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন আগাম নির্বাচনে মেতে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কারণ, কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ছবি শোভা পাচ্ছে এসব ব্যানার-পোস্টারে। দেয়ালগুলোর কোথাও তিল ধারণের জায়গা রাখা হয়নি। বুদ্ধিজীবী দিবসের জন্য প্রস্তুত সৌধ : আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত রায়েরবাজার ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। এ দুই স্থান পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করে তোলা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নতুন রং করা লাল ইটের ওপর সকালের রোদ পড়ে ঝলমল করছে। ছড়াচ্ছে বর্ণিল আলো। কৃষ্ণচূড়া, শিমুল ও কড়ই পাতায় ছিল সায় মেলানো মৃদুমন্দ দুলুনি। স্মৃতিসৌধকে দেখাচ্ছিল নতুন অবয়বে। অভিযোগ রয়েছে, রায়েরবাজার ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বছরে একবারই ধোয়ামোছার কাজ করা হয়। বাকি সময় যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় ঢেকে থাকে। হকার আর ছিন্নমূলদের রাজত্বে থাকে দুই স্থান। এ ব্যাপারে মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ ভূইয়া বলেন, ‘প্রতি বছর ডিসেম্বর এলেই আমরা বুদ্ধিজীবীদের খবর নিই। অন্য সময় সবকিছু ভুলে যাই। অথচ তাদের নামে কেউ পোস্টার বা ব্যানার তৈরি করে না। মনিটরিং না থাকায় সারা বছর দুই স্মৃতিসৌধের যে অবস্থা থাকে, তাতে উপেক্ষা ও অবহেলাই স্পষ্ট হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও কষ্টকর।’ দেখা গেছে, মিরপুরে একসঙ্গে ঝাড়ু দিচ্ছিলেন ১৫ জন নারী। তাদের একজন ৫০ বছর বয়সী মরিয়ম বিবি বলেন, ‘হাউসের মধ্যে নাইম্যা শেওলা ডলছি। আইজ খালি ঝাড়ু মারতেছি। বছরে কয়েকবার পরিষ্কার করলে জায়গাটা পরিষ্কার থাকত।’ স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর এলেই বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা হয়। আবার এই দিবসকে কেন্দ্র করে শুরু হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা। অনেক নেতা নিজের ছবি দিয়ে নানা ধরনের পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করেন। এতে শহীদদের আত্মার অবমাননা হয়। আমরা এমন কিছু চাই না।’ স্মৃতিসৌধটি বিনোদন পার্কের মতো ব্যবহূত হয় বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম। তিনি বলেন, ‘স্মৃতিসৌধ নির্মাণকালে এর ভাবগাম্ভীর্য রক্ষায় শহীদ পরিবার থেকে কিছু প্রস্তাব ছিল। যার সঙ্গে কর্তৃপক্ষ একমত পোষণ করেছিল। তবে তার বাস্তবায়ন আদৌ হয়নি। স্থানীয় লোকজনের বেশির ভাগই জানে না কেন এই সৌধ? এর ইতিহাস কী? পরের প্রজন্মের কাছে এই আত্মত্যাগের বিবরণ তুলে ধরার কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। এমনকি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে থাকে না কোনো স্মরণিকাও।’ মিরপুর বধ্যভূমি এলাকায় আরও দেখা গেছে, স্মৃতিসৌধের সামনের সড়ক ও ভিতরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট দলের সদস্যরা মহড়া দিচ্ছেন। বিউগলে বাজছিল করুণ সুর। এ ছাড়া লাগানো হয়েছে নতুন ঘাস। ইটগুলো ধোয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, এবারও দুই স্মৃতিসৌধ এলাকায় নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। গতকাল ভোর থেকে এ দুই এলাকা রয়েছে নিশ্ছিদ্র বেষ্টনীর মধ্যে। আজ ভোরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার জাতির পক্ষে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা শ্রদ্ধা জানাবেন। আরও শ্রদ্ধা জানাবেন বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থা এবং সেবামূলক সংগঠন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর