সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগে বর্তমান-সাবেক এমপির দ্বন্দ্ব, ফুরফুরে বিএনপি

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

আওয়ামী লীগে বর্তমান-সাবেক এমপির দ্বন্দ্ব, ফুরফুরে বিএনপি

নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-১ আসনে। আয়তনে জেলার সবচেয়ে বড় এ উপজেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী। তখন থেকে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে হানাহানি-মারামারি লেগেই থাকে সারা বছর। এতে হতাশ দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এই বিরোধ না মিটলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে বিএনপির নেতাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই বললেই চলে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চুর একক নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা পরিচালিত হচ্ছেন। তাই বিএনপির লোকজন এখানে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর বর্তমান সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের প্রিয়ভাজন হিসেবে পরিচিত। তবে ছোট ভাইদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য কিছুটা বেকায়দায় আছেন এই নেতা। জানতে চাইলে রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, দলের একটি পক্ষের সঙ্গে বিরোধ থাকায় তার নামে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি প্রবীণ নেতা আফাজ উদ্দিন আহমেদও মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরা এই নেতা মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আফাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। কিন্তু কৌশলে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়। তবে দলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী তার সঙ্গে  রয়েছেন বলে দাবি এই নেতার। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সরোয়ার জাহান বাদশা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোফাজ্জেল হক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের ভাই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য রশিদুল আলম এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চুকে  দলের একক প্রার্থী মনে করেন বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। তবে ওয়ান ইলেভেনের পর রেজা আহমেদ বাচ্চু রাজনীতি থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে এই আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলতাফ হোসেনকে। অবশ্য বর্তমানে সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লাই বিএনপির হাল ধরে রেখেছেন এবং তিনিই দলকে সংগঠিত করার কাজে তৎপর আছেন। জানতে চাইলে রেজা আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারলেও তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সংগঠিত রেখেছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তার বিকল্প কাউকে ভাবছে না। রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লার পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার মঙ্গল, আলতাফ হোসেন, রমজান আলী সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। বড় দুই দলের বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফারিয়ার জামিল জুয়েল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন নির্বাচন করবেন। তবে জামায়াত থেকে এ আসনে কাউকে নির্বাচনে মাঠে না-ও দেখা যেতে পারে। এ উপজেলায় জামায়াতের ভোট নেই বললেই চলে।

সর্বশেষ খবর