সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেয়ার কারসাজিতে ওরা দশ

আলী রিয়াজ

শেয়ার কারসাজিতে ওরা দশ

অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের কাছেই এখনো জিম্মি শেয়ারবাজার। চিহ্নিত এই কারসাজি সিন্ডিকেট কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। দিনের পর দিন একই ধরনের শেয়ার কারসাজি করে চলছে। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কারসাজির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব ব্যক্তির নাম এসেছিল তারা এখনো নিয়ন্ত্রক কারসাজির। প্রতিকারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও কোনো কিছুই করতে পারছে না। মামলা, জরিমানা করার পরও তাদের কারসাজি থামছে না। শেয়ারবাজারে এখন এদের পরিচয় শেয়ার কারসাজির মাফিয়া সিন্ডিকেট হিসেবে। এই সিন্ডিকেটের শীর্ষ দশজন নিয়ন্ত্রণ করছেন সবকিছু। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলার বিচার না হওয়ায় বেপরোয়া এসব ব্যক্তি। জালিয়াতি, কারসাজি থামাতে হলে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পেলে এদের আজীবন নিষিদ্ধ করা উচিত। এ ছাড়া ক্ষুদ্র কোম্পানির শেয়ার আপলোডের ক্ষেত্রে বিএসইসির আরও সতর্ক হওয়া উচিত। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগে দশজনের নাম এসেছে। একটি কোম্পানির পরিচালক ও বৃহৎ বিনিয়োগকারী রয়েছেন এ তালিকায়। নিজেরা তো কারসাজি করেনই, সঙ্গে তাদের স্ত্রীদেরও জড়িয়েছেন। কারসাজি সিন্ডিকেটের শীর্ষ মাফিয়ার তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে প্রথম তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। ওই মামলায় জেলও খেটেছেন। জামিন পেয়ে আবারও তারা কারসাজিতেই জড়িয়েছেন। ২০১৬ সালেও এই তিন মাফিয়াকে সতর্ক করে চিঠি দেয় বিএসইসি। ২০১০ সালে মারিকো বাংলাদেশের শেয়ারে কারসাজির অভিযোগে একজনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের কারসাজির প্রমাণ তুলে ধরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবুও থেমে নেই তাদের কারসাজি। জরিমানা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিএসইসি। সর্বশেষ গত মাসে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই তিনজনকে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। বাকিদের মধ্যে একজনকে ২০ লাখ ও অন্যদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে। জানা গেছে, কারসাজির জন্য মাফিয়ারা ছোট ছোট কোম্পানিকে বেছে নেন। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে মাত্র কয়েকজন বিনিয়োগকারী ওই কোম্পানির অধিকাংশ শেয়ার কিনে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। এরপর বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে নিজেদের হাতে থাকা শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করে তারা মুনাফা নিয়ে চলে যান। এসব কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগ একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধেও রয়েছে। এর মধ্যে মিরর ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট, সোহেল সিকিউরিটিজ, এম সিকিউরিটিজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করেছে বিএসইসি। বিষয়টি নিয়ে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার কারসাজি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শেয়ারবাজারে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি কারসাজিতে জড়িত। এরা বিভিন্ন পন্থা ব্যবহার করে এই অনিয়ম করে যাচ্ছে। এসব অপরাধ দমনে কঠোর না হলে তারা থামবে না। আমার প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে শাস্তির সুপারিশ করেছিলাম। অধিকতর তদন্ত করতে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিছু তদন্ত পরে কমিশন করেছে। তবে শাস্তি দেওয়া হয়নি কাউকে। শুধু জরিমানা করে এদের ঠেকানো যাবে না। প্রয়োজনে শেয়ারবাজারে কাউকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর