বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

১৯ সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসামি পক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঞ্চল্যকর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১৯ জন সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা।

আদালতে তারা বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে কেউ নাম বলেননি। কেউ নিজ চোখে দেখেনওনি। পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদ দেখে আসামির নাম জেনেছেন। এমন সাক্ষ্যের ভিত্তিতে একজন মানুষকে সাজা দেওয়া হবে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। নিজ নিজ আসামির বেকসুর খালাসও দাবি করেন তারা। গতকাল রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ বক্তব্য তুলে ধরেন পলাতক ৫ আসামির রাষ্ট্রনিযুক্তি আইনজীবী। পরে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ৯, ১০ ও ১১ জানুয়ারি দিন ঠিক করেছেন বিচারক। গতকাল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের ২৭তম দিনে পলাতক ১৮ আসামির মধ্যে হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী চৈতন্য চন্দ্র হালদার, পলাতক মো. খলিলের পক্ষে অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান খান, বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আশরাফ-উল আলম, বিএনপি নেতা পলাতক হারিছ চৌধুরীর পক্ষে অ্যাডভোকেট আবু তৈয়ব ও পলাতক আনিসুল মোরসালিনের পক্ষে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, স্পেশাল পিপি মো. আবু আবদুল্লাহ ভুঞা, আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল প্রমুখ। বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের আইনজীবী আশরাফ-উল আলম তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, আসামি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। আজকে তিনি পলাতক, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে স্পিকারের অনুমতি নিয়েই বিদেশে গিয়েছেন। যখন বহুল আলোচিত এই মামলাটির সম্পূরক অভিযোগপত্রে তার নাম যুক্ত করা হলো, এরপর আর তিনি দেশে আসেননি। শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে রাজনৈতিকভাবে। আশরাফ বলেন, মুফতি হান্নানের বক্তব্যের ভিত্তিতে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ দুটি মামলাতে (হত্যা ও বিস্ফোরক) দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও হানিফসহ ৩০ জন নতুন আসামি করা হয়। কায়কোবাদের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষের ১৭৭ থেকে ২০৩ নম্বর পর্যন্ত ১৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা আদালতে তুলে ধরেন। এই ১৯ জন সাক্ষীর মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস রয়েছেন। আইনজীবী আশরাফ বলেন, এসব সাক্ষী কেউ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে কায়কোবাদের নাম না বললেও আদালতে এসে হানিফের নাম বলেছেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, গণমাধ্যম ও দলের নেতা-কর্মীদের কাছে শুনে। সাক্ষীদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয় দাবি করে কায়কোবাদের বেকসুর খালাস দাবি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী। তিনি বলেন, শোনা কথার ওপরে ভরসা করে বহুল আলোচিত এই মামলাটিতে শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদকে সাজা দিলে তা হবে মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

আইনজীবী আশরাফ-উল আলম ছাড়াও গতকাল রাষ্ট্রনিযুক্ত আরও চার আইনজীবী নিজেদের পলাতক আসামিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তারা সবাই রাষ্ট্রপক্ষের এই ১৯ আসামির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪জন প্রাণ হারান। অল্পের জন্য বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ হামলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান এবং শরীফ সাইফুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর