শিরোনাম
সোমবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

খুলনা বিমানবন্দরের কাজ শেষ কবে

আটকে আছে জমি অধিগ্রহণে, অনিশ্চয়তায় অবকাঠামো নির্মাণ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনা বিমানবন্দরের কাজ শেষ কবে

খুলনা খানজাহান আলী বিমানবন্দরে চরছে গরু। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে অনেক সরঞ্জাম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনার খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুন মাসে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের কাজই এখনো শেষ হয়নি। পাশাপাশি বিমানবন্দর নির্মাণ বিষয়ক ‘রোডম্যাপ’ অনুযায়ী প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়োগ, চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগেও বিলম্ব হয়েছে। প্রকল্প এলাকার স্থাপনা ও বৃক্ষ অপসারণের কাজ চলছে ঢিমেতালে। ফলে চলতি বছরের মধ্যে ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির দৃশ্যমান অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (একনেক) দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত বাগেরহাটের ফয়লায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৬ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে দেওয়া হয় ৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু ভূমি জরিপ ও অধিগ্রহণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো সেই টাকা ব্যয় করা যায়নি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, বিমানবন্দরের প্রকল্পভুক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ে ছয় ধারার কাজ শেষ হয়েছে। এখন পূর্ত বিভাগ ও বন অধিদফতর প্রকল্প এলাকার স্থাপনা ও বৃক্ষের মূল্য নির্ধারণ করবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ পরিশোধ করা হবে। এরপর জুন মাস নাগাদ শুরু হবে বিমানবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিমানবন্দর নির্মাণ তদারকির জন্য এখনো প্রকল্প এলাকায় কোনো কার্যালয় স্থাপন করা হয়নি। অবাধে বিচরণ করছে গবাদিপশু। মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহূত কয়েক কোটি টাকা দামের একাধিক ট্রাক, রোলার, ড্রেজার, তেলবাহী ট্যাংক অযত্নে মরচে ধরে ইতিমধ্যে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে। তবে বাগেরহাট সদর ও রামপাল উপজেলার চারটি গ্রামে অধিগ্রহণ করা জমিতে নতুন করে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় কোনো কাজ চলছে না।

জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব : বিমানবন্দরের জন্য ৯৪ একর জমি অধিগ্রহণ হয় ১৯৯৭ সালে। তবে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করতে ২০১৬ সালে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের একটি টিম ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য জমির মাঠপর্চা, ম্যাপ ও খতিয়ানের রেকর্ড সংগ্রহ করে। বাগেরহাটের অতিরিক্ত ভূমি হুকুমদখল কর্মকর্তা নিত্য গোপাল জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০১৭ সালে নতুন ১৫০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ভূমি জরিপ কাজ শেষে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। একই কথা জানান বিমানবন্দর নির্মাণকাজে যুক্ত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী কাজী বায়েজিদ আহমেদ। তবে কবে  নাগাদ অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে জানাতে পারেননি কেউ। 

অনিশ্চয়তায় অবকাঠামো নির্মাণ : আগামী জুন নাগাদ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা যাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বাগেরহাট-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা সাংবাদিকদের জানান, ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হবে। জমির মালিকানা নির্ধারণের পরই শুরু হবে বিমানবন্দরের মূল কাজ। তবে জমি অধিগ্রহণে বিলম্বে হয়তো চলতি বছরের জুন মাসে মূল কাজ শুরু করা যাবে না। তবে খুলনা-২ আসনের এমপি মিজানুর রহমান বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার বিমানবন্দর নির্মাণ শেষ   করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের প্রস্তাবনা : এদিকে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণে আর্থিক সহায়তার কথা জানিয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সম্প্রতি যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রম পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছে। রেলপথে মোংলা বন্দরকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ৩৫ কোটি ডলার ব্যয়ে রেললাইন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণেও ভারত প্রস্তুত। তবে এই প্রস্তাবনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা বৈঠক হয়নি।

নির্মাণ বিলম্বে উদ্বেগ : এর আগেও কয়েকদফা বিমানবন্দরের কাজ বন্ধ হয়েছে। ১৯৯৭ ও ২০০১ সালে মাটি ভরাটের কাজ অর্থ বরাদ্দের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে প্রথম ধাপে ছোট বিমান ওঠানামার জন্য ২৫০ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে এ দুটি প্রস্তাবনা একীভূত করে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। জনউদ্যোগ, খুলনার আহ্বায়ক নাগরিক নেতা আইনজীবী কুদরত-ই খুদা বলেন, জমি অধিগ্রহণের ধীরগতির কারণে বিমানবন্দর নির্মাণকাজ পিছিয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর