শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বেহাল দুই সড়ক কাহিনী

ঝুলে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনের কাজ

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ ঝুলে গেছে। কাজের প্রাক্কলন ব্যয় নিয়ে দর কষাকষিতে এক মত না হওয়ায় সরকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে (সিএইচইসি) দেয়নি। এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সে উদ্যোগেও অনেকটা ভাটা পড়েছে। গত সপ্তাহে এনিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। আগামী মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠকের পরই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের ভাগ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে জানিয়েছিলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করবে। বেশি দর দেওয়ার কারণে সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে দিচ্ছে না। তিনি জানান, সরকারি অর্থায়নে চলতি বছরেই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।  সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তীতে সরকারি অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে গত সপ্তাহে বৈঠক করেছেন সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে ওই বৈঠকে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, অনেকগুলো পর্যবেক্ষণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে— প্রকল্প বাস্তবায়নে চায়না হারবার যে দর দিয়েছিল সেই দরের সঙ্গে সরকারি দরের বেশ তফাত দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি যে দর দেওয়া হয়েছে সেটি চায়না হারবারের চেয়ে বেশি। পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কেন এই তফাত বা সরকারি দর বেশি কেন তা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে আগামী মঙ্গলবার আবারও বৈঠকে বসবেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি চায়না হারবার থেকে সরকারি দর বেশি হয় তাহলে বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে চায়না হারবার এই প্রকল্পের কাজ পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে সময় লাগবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যদি সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে এর ডিপিপি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপর অনেকগুলো আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হতে বেশ সময় লাগবে। এক্ষেত্রে চলতি বছরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়া অনিশ্চিত। এর আগে জিটুজি ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য গত বছর অক্টোবরে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। কথা ছিল, চলতি বছরের শুরুতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কিন্তু চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং যে ব্যয় প্রস্তাব করেছে তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। এ কারণে চায়না হারবারের প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলনে সওজের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত কারিগরি কমিটি সওজের বিদ্যমান শিডিউল রেট ও চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে তুলনাপূর্বক প্রকল্পটির ব্যয় চূড়ান্ত করে। কমিটি তাদের মতামতে জানিয়েছিল, জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি বাদ রেখে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে ব্যয় প্রাক্কলন করে ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা হবে। আর চায়না হারবার এ ব্যয় প্রাক্কলন করে ১৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ কারণে চায়না হারবারকে এ প্রকল্পের কাজ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তারপরই মূলত ঝুলে যায় সরকারের বৃহৎ এই প্রকল্পের কাজ। অথচ গত বছর প্রথম দিকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সরকার চেয়েছিল আগামী নির্বাচনের আগেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ দৃশ্যমান করতে।

সর্বশেষ খবর