শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দর্শক মাতালো উন্নয়ন কনসার্ট

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

দর্শক মাতালো উন্নয়ন কনসার্ট

আর্মি স্টেডিয়ামজুড়ে গতকাল ছিল উন্নয়ন শৈল্পিকতার নানা আয়োজন। সরকারের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে এ আনন্দ উৎসবে যুক্ত হয়েছিলেন প্রায় ৩০ হাজার দর্শক-শ্রোতা। বিটিভি এবং দেশ টিভি এ আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করে।

এ সময় সুরের খেলা আর নাচের মুদ্রার পাশপাশি বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয়েছে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নানা তথ্যচিত্র। যাতে দৃশ্যমান হয়েছে   বিগত চার বছরের পথচলায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিশালাকার নানা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। এভাবে শিল্পের রস আস্বাদনের পাশাপাশি নিজ চোখে স্বদেশের উন্নয়নের চিত্র দেখেন আপামর জনতা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘পিতার স্বপ্নে কন্যার আহ্বানে কোটি মানুষের মিছিল চলেছে মুক্তির অভিযানে’। অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে এ সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশ দীর্ঘদিন উল্টো পথে হেঁটেছে, বাংলার ইতিহাসের ভুল পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চিত্র পাল্টে যায়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবাতাস বইতে শুরু করে, শুরু হয় উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় উজ্জ্বল আলোর অভিসারী হয়ে নতুন লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে, তখন আমাদের উন্নয়নের পথটি কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। আন্দোলনের নামে গণবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, ইসলামের অপব্যাখা দিয়ে জঙ্গিবাদের জন্ম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রশ্রয় দেয়নি। আমরা কেনোভাবেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেব না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছেন- তা আমরা ব্যাহত হতে দেব না।’

শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের নৃত্য-গীতের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল দলছুট, চিরকুট, সোলস, ব্যান্ডশিল্পী জেমস এবং ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ। সরকারের চার বছরপূর্তিতে এ দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সেই ভাষণটিও অনুষ্ঠানস্থলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি সম্প্রচারের সময় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে এ সময় করতালির বৃষ্টিতে স্টেডিয়ামকে প্রকম্পিত করে তোলেন অনুষ্ঠানস্থলে আগত দর্শক-শ্রোতারা। শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিকাল ৪টায় এই আনন্দযজ্ঞ শুরু হয়। এরপর তারা সমবেতভাবে পরিবেশন করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানিয়া গান ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। এরপর মঞ্চে আসেন অনিক বোস ও তার দল। ‘জ্বলে উঠো বাংলাদেশ’ এবং ‘এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের’ গান দুটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে স্টেডিয়ামে আগতদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায় নাচের এই দলটি। এরপর ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা, একটি গর্ব একটি বাংলাদেশ’ ও ‘চলো বাংলাদেশ’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা। নাচের পর দীপা খন্দকারের পরিচালনায় ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানের সঙ্গে সমবেত নাচ করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। পরে অ্যাক্রোবেটিক শো নিয়ে মঞ্চে আসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল। অনন্য কৌশলে ‘চেয়ারসিটিং’ ও ‘নেকআয়রনবার’ শীর্ষক দুটি অ্যাক্রোবেটিক শো পরিবেশন করেন তারা। এ ছাড়া এম আর ওয়াসেকের নৃত্য পরিচালনায় ‘চলো এগিয়ে যাই’ ও ‘বুকের ভিতর আকাশ নিয়ে একটাই আছে দেশ’ গানে দলীয় নৃত্য পরিবেশনের পর দীপা খন্দকারের পরিচালনায় ‘ওই উজ্জ্বল দিন’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির শিল্পীরা। নৃত্য শেষে সমীর বাউলের পরিচালনায় ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ ও ‘আমার এ ঘরখানায় কে বিরাজ করে’ গান দুটি সমবেতভাবে গীত হয় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের কণ্ঠে। আয়োজনে সমবেতভাবে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা আরও পরিবেশন করেন ‘নাও ছাড়িয়া দে’ ‘পৃথিবী একবার এসে’ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো’ ‘শোন একটি মুজিবুরের থেকে’ ও ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ ইত্যাদি। শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসে ব্যান্ড দল দলছুট, চিরকুট, সোলস, ব্যান্ডশিল্পী জেমস। নিজেদের জনপ্রিয় গানগুলোর পরিবেশনায় আর্মি স্টেডিয়ামের সর্বত্র সুরের ধারা বইয়ে দেন শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে একক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, সুবীর নন্দী, মমতাজ ও শফি মণ্ডল।

বিকাল ৪টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে মনোজ্ঞ এ অনুষ্ঠান।

সর্বশেষ খবর