শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন ঘিরে জামায়াত বিএনপি টানাপড়েন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০ দলীয় জোটপ্রধান বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দিয়েছে অন্যতম শরিক জামায়াতের। দল দুটির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে— এমন কথা আগেই চাউর ছিল। কিন্তু জোটের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই মেয়র পদে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা সংকট প্রকট করে তুলেছে। জামায়াত নেতাদের যুক্তি : রংপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি কোনো আলোচনা করেনি। তাই তারাও একই পন্থায় সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেলিম উদ্দিনকে প্রার্থী ঘোষণা করায় বিএনপির ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে প্রধান ইস্যু ছিল জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া। তিনি জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দায়িত্ব দিয়েছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করার জন্য। তিনি আরও জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে একক প্রার্থী দেওয়া হবে। কিন্তু কোন দল থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে তা ঠিক হয়নি। আমরা মনে করি সেলিম উদ্দিনের চেয়ে ২০ দলীয় জোটের ভালো প্রার্থী আর হতেই পারে না। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। এতে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। এ ছাড়া জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা চলছে। বিএনপি এবং জামায়াত একে অন্যকে বিশ্বাস করতে পারছে না। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেওয়া ফাঁসির দণ্ড নমনীয় করে আমৃত্যু কারাদণ্ড করার পর থেকে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে সন্দেহ-সংশয় ও কানাঘুষা। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজে শ্লথগতি এবং জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যদের ঘোষিত দণ্ড কার্যকর করার ব্যাপারে সময় নেওয়ায় সন্দেহ বাড়িয়ে দেয়। বিএনপি মনে করছে, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের একটা রফার পরিণতিতেই এটা ঘটবে। জামায়াতও বিভিন্ন সময় বিএনপির আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং তা মিডিয়ায়ও এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরু হলে দলটি কঠোর আন্দোলন শুরু করে। জামায়াতের সে কর্মসূচিতে বিএনপির জোরালো সমর্থন না থাকায় জামায়াত-বিএনপির মধ্যে সন্দেহ ও দূরত্ব বাড়তে থাকে। জামায়াত নেতারা বলেন, বিএনপির মধ্যে থাকা জামায়াতবিরোধী কিছু নেতার চেষ্টাই হচ্ছে খালেদা জিয়ার কাছে প্রমাণ করা যে, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সমঝোতা আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন যদি ‘ঘরের শত্রু বিভীষণদের’ কথা শোনেন তাকে পস্তাতে হবে। ২০ দলীয় জোটের শরিক বিভিন্ন দলের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও এই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কথা জানান। তারা বলেন, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির আগে থেকেই সন্দেহ ছিল। তাদের নেতাদের বাঁচানোর জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন— এমন কথা শোনা গিয়েছিল। আবার জামায়াতের মধ্যেও বিএনপিকে নিয়ে অনাস্থা রয়েছে। জোটের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে আগের সেই সুসম্পর্ক নেই এটা একেবারেই নিশ্চিত। তারপরও বিএনপির একটি অংশ চায় জামায়াত জোটে থাকুক, অপর একটি অংশ চায় জামায়াতকে বের করে দেওয়া হোক। তাদের যুক্তি, জামায়াতকে সঙ্গে রাখার ফল হয়েছে নেতিবাচক। কর্মসূচি দিলে বলা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিএনপির কর্মসূচি। জামায়াতের মজলিসে শূরার এক সদস্য বলেন, সেলিম উদ্দিন যোগ্য প্রার্থী। আমরা আশা করব ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সেলিম উদ্দিনের নাম ঘোষণা করে টানাপড়েন ঘোচাবেন।

সর্বশেষ খবর