শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ছাদ কৃষিতে জৈব সার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ছাদ কৃষিতে জৈব সার

চট্টগ্রাম নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গার বিজয় নগর এলাকার বাসিন্দা হাজী নুরুল আলমের বাসার সুপরিসরের ছাদ। ছাদেই উৎপাদন করছেন নানা সবজি ও ফল। সবুজ সবজি উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নাঘরের পচনশীল আবর্জনা থেকে উৎপাদিত জৈব সার। সবুজ গাছে সূর্য্যের আছড়ে পড়া আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে নানা সবজি। ছাদেই শোভা পাচ্ছে টমেটো, কাঁচামরিচের গাছ ও শাক। নুরুল আলম বলেন, বাসার আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করে শাক-সবজি উৎপাদন করছি। কম সময়েই প্রতিটি গাছে ফল আসে। জৈব সার ব্যবহারে বাজারের সারের প্রয়োজন পড়েনি। ফলে অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। মানুষ সচেতন হলে নতুন এ পদ্ধতিতে অনেক উপকার পাবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শে নুরুল আলমের মতো এখন চট্টগ্রাম নগরে প্রাথমিকভাবে ১২টি ছাদে সবজি চাষ চলছে। এসব ছাদে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ফলের খোসা, রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, মাটি ও সামান্য পরিমাণ সারের তৈরিকৃত জৈব সার। বর্জ্য দিয়ে সার তৈরির ফলে দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত হচ্ছে পরিবেশ। রোধ হচ্ছে আবর্জনা সমস্যা। সাশ্রয় হচ্ছে অর্থের। আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন উৎপাদনকারীরা। উৎপাদন হচ্ছে নিরাপদ শাক-সবজি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আমিনুল হক চৌধুরীর এ উদ্যোগ এখন ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে।  জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রান্নাঘরের আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করতে বাসাবাড়িতে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে দুটি বিন (ময়লা ফেলার পাত্র)। এর একটিতে সম্পূর্ণ অপচনশীল দ্রব্য (মাছের কাঁটা, প্লাস্টিক, কাচ, পলিথিন ইত্যাদি) এবং অপরটিতে সম্পূর্ণ পচনশীল দ্রব্য (শাক সবজি, ফল ইত্যাদি) রাখা হবে। এর সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে একটি মাঝারি আকারের প্লাস্টিকের ড্রাম। পচনশীল আবর্জনাগুলো প্রতিদিন এই ড্রামে জমা করা হবে। আবর্জনা জমতে জমতে যখন তা ড্রামে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির একটি স্তর তৈরি হবে তখন মাঝামাঝি স্তরে এসে ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম মাটি দেওয়া হবে। তার উপরে ইউরিয়া, পটাসিয়াম, জিএসপি এই তিন প্রকারের ৫০ গ্রাম সার সেখানে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে আবার আরেকটি তিনটি স্তর করার পর ড্রামটি  পুরোপুরি ভরে গেলে ঢাকনা বন্ধ করে দিতে হবে।

 তবে মাঝে মধ্যে গ্যাস যাওয়ার জন্য ঢাকনাটি খুলতে হবে। আগে থেকে ড্রাম ফুটো করে দেওয়া হলে আর ঢাকনা খোলার প্রয়োজন হবে না। এভাবে থাকার পর দুই থেকে আড়াই মাসের মাথায় ড্রামটি খুললে ড্রামে থাকা উপাদানগুলো পচে জৈব সার তৈরি হয়ে যাবে। ড্রাম খোলার পর তৈরিকৃত জৈব সার এক থেকে দুই ঘণ্টা বাতাসে দিলে তা ঝরঝরে হয়ে যাবে। তৈরিকৃত এ সার পরে ব্যাগে করে রেখে দিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত চাষাবাদের কাজে ব্যবহার করা যাবে। উপ-পরিচালক আমিনুল হক চৌধুরী বলেন, শহরে বর্জ্যের সিংহ ভাগই শাকসবজির। কিন্তু এর ক্ষতি ব্যাপক। পরিবেশ দূষণ, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, দুর্গন্ধ ছড়ানোসহ ক্ষতিকর প্রভাব আছে। অথচ এসব বর্জ্য থেকে জৈব সার তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া বাগানগুলোতে জৈব সার ব্যবহারের সুফল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সার ও মাটি পরীক্ষার জন্য ঢাকার মৃত্তিক সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। পতেঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, শতভাগ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রান্নাঘরের পচনশীল বর্জ্য থেকে উৎপন্ন কম্পোস্ট সার খুবই উপকারী। কারণ এতে রান্নার পচনশীল বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নতমানের জৈব সার ব্যবহার করা যাচ্ছে।  এ ছাড়া এটি স্বল্প খরচ, অল্প সময় ও স্বল্প শ্রমে গাছের জন্য উত্কৃষ্টমানের জৈব সার উৎপাদন করা যাচ্ছে। এটি পরিবারের জন্য নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সহায়ক। বাজারের সার থেকে রান্নাঘরের আবর্জনা থেকে তৈরিকৃত সার অনেক বেশি উন্নতমানের। বর্তমানে অনেকে এ সার ব্যবহার করে ভালো ফসল উৎপাদন করছে। এতে আর্থিকভাবেও অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর