মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেট্রোরেলে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ

জিন্নাতুন নূর

মেট্রোরেলে ব্যাপক  কর্মযজ্ঞ

উত্তরায় জোরেশোরে কাজ চলছে মেট্রোরেলের —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মেট্রোরেল প্রকল্পের ৯টি টেস্ট পাইলের কাজ শেষে মূল পাইলের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের ডিপো এলাকার বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ। বর্তমানে সাইট অফিস নির্মাণ এবং ডিপোর অভ্যন্তরে চেক বোরিং কাজ চলছে। মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ৭৫ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে ২০১৯-এর শেষ দিক হতে কয়েকটি ধাপে প্রকল্পে ব্যবহূত যান বাংলাদেশে আসতে শুরু করবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে এসব জানা যায়। আর প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বর্তমানে গোটা মিরপুরজুড়ে জোরেশোরে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। কাজ সময়মতো শেষ করতে শ্রমিক ও নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতরা দিন-রাতে দুই শিফটে এখন কাজ করছেন। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০.১০ কি.মি. দীর্ঘ ১৬টি স্টেশন বিশিষ্ট উভয় দিকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম অ্যালিভেটেড ম্যাস র‌্যাপিড ট্রান্সজিট লাইন-৬ হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। সাধারণের গণপরিবহন ব্যবস্থার সুবিধার্থে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট বা মেট্রোরেল প্রকল্পটি জুন, ২০১২ সালে গ্রহণ করা হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর, কালশী মোড়, মিরপুর ১১ নম্বর, মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা, কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, তালতলা এবং আগারগাঁও এলাকা পর্যন্ত দিন-রাত কয়েকশ শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে কালশী মোড় ও আগারগাঁও মোড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে আগারগাঁও এলাকায় মেট্রো রেলের একটি অবকাঠামো গড়ে উঠছে। সেখানে মেট্রো রেলের কাজে ব্যবহূত বড় বড় ক্রেন, পাইলিং যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। কাজের সুবিধার্থে আগারগাঁও-এ নির্মাণ স্থাপনার পাশেই প্রকল্প অফিস তৈরি করা হয়েছে। সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহূত সিমেন্ট, ইট, বালু ও সুরকি ইত্যাদি। কালশী থেকে মিরপুর ১১ নম্বর, মিরপুর ১০ নম্বর এবং আগারগাঁও থেকে তালতলা পর্যন্ত দুই সড়কের মাঝের অংশে দুর্ঘটনা এড়াতে উঁচু টিনের ব্যারিকেড, লোহার তারকাঁটা এবং রাতে কাজের সুবিধার্থে উজ্জ্বল আলো জ্বেলে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা কালশী থেকে মিরপুর ১১ নম্বর এবং ১০ নম্বর এলাকার। গুটিকয়েক এলাকা ছাড়া প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত অধিকাংশ এলাকাই আইল্যান্ডের পরিবর্তে রোড ডিভাইডার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেসব এলাকায় এখনো ডিভাইডার লাগানো হয়নি সেখানে কংক্রিটের ডিভাইডার এনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শিগগিরই তা বসানো হবে।  পূরবী এলাকার সামনে প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বর্তমানে এখানে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বেলা ১১টা থেকে কাজ শুরু হয়ে ভোর রাত পর্যন্ত কাজ চলছে। দিনে-রাতে দুই শিফটে এখানে প্রায় ৮০ জন কর্মী কাজ করছেন। মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক (ফ্যাসিলিটিজ অ্যান্ড অ্যাডমিনিসট্রেটিভ) হারুন-অর-রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মেট্রোরেলের মূল পাইল নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে  গেছে। কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পায়নি। অর্থাৎ প্রকল্পটির পূর্বের ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকাই আছে। এর মধ্যে জিওবি (জেনারেল অবলিগেশন বন্ড) ৫,৩৯০.৪৯ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা ১৬,৫৯৪.৫৯ কোটি টাকা। এই কাজ মোট আটটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পটির শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এখন রাত-দিন দুই শিফটে তারা কাজ করছেন। কাজের সুবিধার্থে নিরাপত্তা হেলমেট, উজ্জ্বল ইউনিফর্ম ও পতাকা হাতে প্রকল্প এলাকাজুড়ে নিয়োজিত আছেন অসংখ্য কর্মী। এদের মধ্যে একদল সড়কে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন আর একদল প্রকল্পের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত। কাজীপাড়ায় এমন এক কর্মী মো. আশিক জানান, প্রকল্প এলাকার পাশে যানবাহন যাতে সড়কে সুষ্ঠুভাবে চলাচল করে আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করি। তবে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গোটা মিরপুর এলাকায় ভাঙা রাস্তাঘাট, ধুলোবালি ও তীব্র যানজট সৃষ্টি হলেও মিরপুরবাসী বৃহত্তর উন্নয়নের জন্য এ কষ্ট মেনে নিয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দা জানান। কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আবদুল বাকের মিয়া বলেন, দিন-রাত যে গতিতে কাজ করা হচ্ছে আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঢাকাবাসীকে মেট্রোরেলে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিতে পারব।

কাজের অগ্রগতি : এরই মধ্যে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরিসেবা স্থানান্তর ও রিলোকেশনের কাজ গত বছর শেষ হয়েছে। এ ছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্যাকেজ ০৫ এবং ০৬ এর পরিসেবা স্থানান্তর ও রিলোকেশনের কাজও শুরু হয়েছে। ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নে টোকইউ কন্সস্ট্রাকশন  লি. এর সঙ্গে ডিএমটিসিএলের ৫৬৭ কোটি ছয় লাখ ৭৪ হাজার ৪০৯ টাকার চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে স্যান্ড কম্পেকশন পাইল (১০০%), ডাইনামিক কম্পেকশন পাইল (১০০%), প্রি ফেব্রিকেটেড ভার্টিকাল ড্রেন (১০০%) এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া মাটি ভরাটের কাজ ৭৫% শেষ হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত এই প্যাকেজের বাস্তব গড় অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ। প্রকল্পের ডিপো এলাকার বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ। বর্তমানে সাইট অফিসের নির্মাণ কাজ এবং ডিপোর অভ্যন্তরে চেক বোরিংয়ের কাজ চলছে। এ ছাড়া উত্তরা ৯ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণের জন্য ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লি:-এর সঙ্গে ডিএমটিসিএলের ৪২৩০ কোটি পঞ্চান্ন লাখ উনিশ হাজার টাকার চুক্তি হয়। এ ছাড়া রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের জন্য কাওয়াসাকি মিটসুবিসি কনসোর্টিয়াম জাপানের সঙ্গে ডিএমটিসিএলের ৪২৫৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছে। যা ২০২১-এর ডিসেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা। প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র কুমার এ প্রতিবেদককে জানান, সর্বশেষ আমরা রুলিং স্টক (যে রেলগাড়িতে যাত্রী চড়বেন) তা ক্রয়ের জন্য একটি চুক্তি করেছি। ইতিমধ্যে চুক্তির বাস্তবায়ন কাজ তিন মাস পার হয়ে  গেছে। ৪২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপান থেকে এই রেল আনা হবে। আশা করছি ২০১৯ সালের শেষের দিকে এই গাড়ি দেশে আসতে শুরু করবে। তবে ২৪টি ট্রেন একসঙ্গে আসবে না। প্রতিবার একসেট ট্রেন সিডিউল অনুযায়ী আনা হবে।

সর্বশেষ খবর