মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মনোনয়ন নিয়ে ১৪-দলীয় জোটে মতবিরোধ

রাজশাহীতে ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি - ২

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী-২ আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আসনটি পায়। এর পর থেকেই আসনটি ১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির দখলে। এবার এ আসনে দলীয় প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ফলে একই বছরের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে রাজশাহী-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে। এর পর থেকে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। দলীয় প্রার্থী দাবির পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির শীতল সম্পর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে তাদের দলীয় প্রার্থী দিতে হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলীয় হাইকমান্ডে লবিং করছেন। তবে আগামী নির্বাচনেও ফজলে হোসেন বাদশার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও মনোনয়ন নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মীর বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। মহানগরী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এই আসনটিতে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন দাবি করছেন। গত বছরের ৫ মার্চ এ আসনটি রাজশাহী অঞ্চলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর দাবি তোলেন তারা। রাজশাহী সার্কিট হাউসে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সামনে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, মহানগরী সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা সহসভাপতি অনিল কুমার সরকার ও মকবুল হোসেন দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন চান। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর ব্যাপারে সোচ্চার। মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, দলের নেতা হিসেবে তিনি ও আরও কয়েকজন সদরে দলের প্রার্থী চেয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, তারা সেভাবেই কাজ করবেন। দলের প্রার্থী দাবি করা দোষের কিছু নয় বলে তিনি মনে করেন। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানের কারণে কিছুটা ক্ষুব্ধ ফজলে হোসেন বাদশা। আর এখন দূরত্ব বেড়েছে সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ও মহানগরী আওয়ামী লীগ সভাপতি লিটনের মধ্যে। ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে লিটনের শীতল সম্পর্ক গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে। আগে একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে গেলেও এখন কেউ কারও সঙ্গে যান না। নগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাদশার ঘন ঘন যাতায়াত ছিল। এখন ওই পথে গেলেও তিনি আওয়ামী লীগ অফিসে যান না। নগরীর বিভিন্ন দফতরে আওয়ামী লীগ নেতাদের তৎপরতায় ক্ষুব্ধ এমপি বাদশা। এ ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে বাদশার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় এ দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে নানা ঠিকাদারি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ অভিযোগ ফজলে হোসেন বাদশার। আবার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নিজের পছন্দের লোক বসানো, টিআর, কাবিখা ও সরকারি বরাদ্দে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বঞ্চিত করার অভিযোগ আছে বাদশার বিরুদ্ধে। লিটনের সঙ্গে দূরত্বের কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘কিছু বিষয় নিয়ে মতভেদ আছে। আমার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে তারা ভাঙন ধরাতে চান।’ তিনি আরও বলেন, ‘লিটন ভাইয়ের সঙ্গে আমার দূরত্ব হয়েছে, এটা ঠিক নয়। আমাকে লিটন ভাই তার বাড়িতে চায়ের দাওয়াত দিলে আমি অবশ্যই যাব।’ তবে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বাদশা ভাই নিজেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতাদের নিয়ে কথা বলেন। আমরা শিগগিরই তার সঙ্গে বসে এসব বিষয়ে কথা বলব।’

সর্বশেষ খবর