মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
নাখালপাড়ায় তিন জঙ্গি নিহত

‘জান্নাতে দেখা হবে’ বলে বিদায় নেন মেজবা

সাখাওয়াত কাওসার

প্রায় দুই মাস ধরে ‘নিখোঁজ’ ছিল রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় নিহত মেজবা উদ্দিন। গত ২৬ অক্টোবর সর্বশেষ বাড়িতে গিয়েছিল সে। তবে ১০ নভেম্বর তাবলিগে যাওয়ার কথা বলে রকিব মিয়ার মেস থেকে বের হওয়ার পর থেকেই ‘নিখোঁজ’। এর কয়েক দিন পর তার স্ত্রী ও মাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে ‘জান্নাতে দেখা হবে’ বলে বিদায় নেয় মেজবা। ওই সময় স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরও রুখতে পারেনি তাকে। বাধ্য হয়েই মেজবার পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৯ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় র‌্যাবের অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়। তখন জাহিদ নামে পাওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুসন্ধানে নেমে তার মূল নাম মেজবা উদ্দিন, বাবার নাম এনামুল হক, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানাধীন বাদুয়ারা এলাকায় বলে জানতে পারে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেজবার বাবাকে ঢাকায় আনা হয়। নিহতের ভাই মোসলেহ উদ্দিন মেজবার মরদেহ দেখে পরিচয় নিশ্চিত করেন। র‌্যাব জানায়, জঙ্গি মেজবা মনোহরগঞ্জের আলী নকিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। ২০০৭ সালে সে ঢাকার সায়েদাবাদের একটি মোটর গ্যারেজে কাজ নেয়। পরে যাত্রাবাড়ী জনপথ মোড়ে মেজবা টায়ার শপ নামে একটি গ্যারেজ চালু করে। থাকত জনপথ মোড়ের পার্শ্ববর্তী রকিব মিয়ার মেসে। নিহতের পারিবারিক সূত্র বলছে, ২০১৫ সালের দিকে মেজবার মধ্যে আমূল পরিবর্তন দেখা দেয়। গ্রামের বাড়িতে অবস্থানকালীন স্থানীয় মসজিদের ইমামের ইমামতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং পরবর্তীতে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী নামাজ আদায় করত। গত বছর পার্শ্ববর্তী গ্রামের লিনাকে (ছদ্মনাম) বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর স্ত্রীর কাছে স্বীকার করে, সে উগ্রবাদিতায় আকৃষ্ট হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর অপরিচিত দুজন যুবক নিয়ে সে সর্বশেষ গ্রামের বাড়িতে যায় এবং ৬ দিন অবস্থান করে। ১০ নভেম্বর থেকে মেজবা পরিবারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে ১৫-২০ দিন আগে স্ত্রী ও মাকে ফোন করে ক্ষমা চায় এবং জান্নাতে দেখা হবে বলে বিদায় নেয়। এদিকে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর রকিব মিয়ার মেসের ম্যানেজার রিপন জানান, গত ৫ অক্টোবর মেজবা তার মেস ভাড়া নেয়। সে নিয়মিত নামাজ পড়ত। স্বভাবও ভালো ছিল। তবে মাঝে-মধ্যে তাবলিগের কথা বলে নিরুদ্দেশ থাকত। গত ৭ নভেম্বর তাবলিগে যাচ্ছে বলে সর্বশেষ মেস ছাড়ে। এরপর আর ফিরে আসেনি। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি তার ভাই ও বাবা ঢাকায় এসে মেস থেকে তার সব জিনিসপত্র নিয়ে যান।

সর্বশেষ খবর