শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আর কোনো ঐশী চাই না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদক বর্তমান সমাজের একটি ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ৭০ লাখ মাদকাসক্তকে সেবা দিয়ে মূল ধারায় আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মাদকের দাবানলে আর কোনো সন্তান ঐশীর মতো নিজের বাবা-মায়ের খুনি তৈরি হোক সেটা আর চাই না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক নির্মূলে আমাদের ল্যাব, জনবল ও প্রশিক্ষণ দরকার। বলতে দ্বিধা নেই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) আগে ছিল ঠুঁটো জগন্নাথ। তিন জেলার দায়িত্বে ছিলেন মাত্র একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে জনবল বৃদ্ধিসহ ডিএনসিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ চলছে। মাদক সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। মাদকের কারণে যুব সমাজ পথ হারালে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। মাদকের চেহারা ও কেমিক্যাল ক্রমেই পাল্টাচ্ছে। আগে ফেনসিডিল ছিল, পরে হেরোইন এলো, এরপর এসেছে ইয়াবা। মাদকের আগ্রাসন রোধে স্কুল-কলেজসহ সব জায়গায় মাদকবিরোধী কথা বলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক সমস্যা শুধু দেশের নয় এটা বিশ্বেরও সমস্যা। ভারত সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানা রয়েছে। সেটা বন্ধ করতে আমরা অনুরোধ করেছি। বর্তমানে ফেনসিডিল কমে এসেছে। এখন ইয়াবা মহামারী আকার ধারণ করেছে। আমরা মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করেছি ইয়াবা কারখানা বন্ধ করতে। আশা করছি তারা ইয়াবা কারখানা বন্ধের উদ্বেগ নেবেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ কী কারণে হলো, কারা করল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অস্ত্রধারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই সংঘর্ষেও ঘটনা তদন্তে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে। যারা অস্ত্র দেখিয়েছে, যারা নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তদন্তের স্বার্থে যা যা করার দরকার আমরা করছি। নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছি। তাদের বলেছি এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করুন। প্রধানমন্ত্রী এগুলো পছন্দ করছেন না। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ফুটপাথ হকারমুক্ত করা নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং এমপি শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি বলেন, জঙ্গি ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। মাদকাসক্ত হওয়ার আগে তা বন্ধ এবং হয়ে পড়লে তার চিকিত্সা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে ২০২১ এবং ২০৪১ সালের ভিশন বৃথা হয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকের ভয়াবহতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চিকিত্সা নিয়েছেন ৬০ হাজার ২৩২ জন। দেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। এ হিসেবে চিকিত্সা সেবা পেয়েছে এক শতাংশেরও কম। সরকারি হাসপাতালে একটি ওয়ার্ড মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেটা হলে অনেক মাদকাসক্ত রোগীকে চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এখন থেকে দ্বিগুণ সেবা দেওয়া যাবে। দেশব্যাপী সরকারি চারটি এবং বেসরকারি ১৯৭টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে। যা অপর্যাপ্ত বা অপ্রতুল নয় বরং কিঞ্চিত। ২৭টি জেলায় কোনো মাদক নিরাময় কেন্দ্রই নেই। দেশব্যাপী সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত।

সর্বশেষ খবর