শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
শেষ হলো বিডিএফ সভা

মধ্যম আয়ের দেশে ঢুকলে বাড়বে আর্থিক ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নই মূল চ্যালেঞ্জ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ৭৫ লাখ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এ নিয়ে আমরা বেশ চিন্তিত। তবে এই চিন্তাই হয়তো অর্থ সংস্থান প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর আগে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীরা যে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার প্রতিফলন হয়েছিল অনেক কম। আশা করা হচ্ছে এসডিজির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হবে। অর্থমন্ত্রী গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) দুই দিনব্যাপী সভার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। এদিকে সমাপনী দিনের সেশনভিত্তিক চারটি আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল (মধ্যম আয়ের) দেশের কাতারে গেলে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যেসব কনসেশনাল ঋণ পেয়ে থাকে সেগুলো কমে আসবে। অর্থাৎ বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। এমন কি রপ্তানি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে যে ডিউটি ফ্রি কোটা পেয়ে থাকে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তখন এই ইস্যুগুলো চ্যালেঞ্জ আকারে সামনে চলে আসবে। যার ফলে আর্থিক ঝুঁকিও বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এসব চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি বাংলাদেশকে এখন থেকেই শুরু করতে হবে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হলে প্রতি বছরই ব্যাপকভাবে যুব সমাজের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এটা করতে পারলে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরাও আকৃষ্ট হবে। এ জন্য মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা ও শিশু পুষ্টি ও স্বাস্থ্য উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

এসব সেশনে বক্তরা বলেন, কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাস, অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের আরও বেশি অংশগ্রহণের সুয়োগ তৈরি করা, মানব সম্পদ উন্নয়নে দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। বৈষম্যরোধে সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী ক্ষমতায়ন বাড়াতে হবে। নাগরিক সেবা বাড়াতে হবে। এসডিজি অর্জনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আলোকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সময় দর্শক সারিতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধি এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় তার সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, ইউএসএইডের মিশন প্রধান জেনিনা জেরুজালস্কি, ইআরডি সচিক কাজী শফিকুল আজম, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ। প্রশ্নোত্তর পর্বে তারা অর্থমন্ত্রীকে সহায়তা করেন।

এ সময় জেনিনা জেরুজালস্কি বলেন, বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এটা আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশের অর্থনীতির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি অনেক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। বিশেষ করে অবকাঠমো নির্মাণ ও শিক্ষা খাত দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তার মতে বিস্ময়কর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

রোহিঙ্গ ইস্যু দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে, এ বিষয়টি বিডিএফের সভায় আলোচনা হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার একটু ধীরে চল নীতিতে কাজ করছে। কেননা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এরপরও তাদের জন্য সাময়িকভাবে সব ধরনের মানবিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা চেয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে তিনি চিঠিও লিখেছেন বলে জানান মুহিত। এ ছাড়া সরকার নিজেও এ খাতে বিনিয়োগ করছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর