শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টে সন্তুষ্ট নন রোহিঙ্গা মাঝিরা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চুক্তিতে সন্তুষ্ট হননি রোহিঙ্গারা। বিশেষ করে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের উখিয়া এবং বালুখালীর অস্থায়ী ক্যাম্পের মাঝিরা এর বিপক্ষে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সচেতন মহলও তাদের ফেলে আসা ভিটেমাটির দখল ছেড়ে কোনো আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই পেতে চান না। মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করা হলেই আশ্রিত রোহিঙ্গারা নিজদেশে ফিরবেন, তার আগে নয়—এমন মত জানিয়েছেন উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ ও ২ এর হ্যাডম্যান আরেফ উল্লাহ। এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক মিশন ইউএনএইচসিআর-কে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের পক্ষ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার পরও প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়ায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে বৃহস্পতিবার সাত দিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছেন মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি। মিয়ানমারের অং সান সু চির সরকার তাকে সহযোগিতা করতে এবং দেশে ঢুকতে দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তিনি বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড সফর শুরু করেন। এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত মঙ্গলবার রাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমঝোতায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে গণমাধ্যমে বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের আন্তর্জাতিক মান সমুন্নত রাখতে ইউএনএইচসিআরকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া অপরিহার্য। রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফেরার সুযোগ দিতে হবে, শিবিরে রাখা চলবে না।’ ইউএনএইচসিআর-কে পক্ষ না করা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত করতে মিয়ানমার রাজি হয়নি। তবে এক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সহযোগিতা নিতে রাজি। প্রথম সপ্তাহে দৈনিক ৩০০ করে রোহিঙ্গা ফিরলেও পরে এ সংখ্যা বাড়বে এবং দুই বছরেই বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যালোচনা বৈঠক বসবে প্রতি তিন মাস অন্তর। পরবর্তী বৈঠক আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হলেও, আপাতত যাবে পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গারা। সে ক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআরের সাহায্য নেবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পুরো খরচ বহন করবে মিয়ানমার। প্রথম দফায় ফেরত যাবে জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গারা। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকশেষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বুধবার ঢাকায় ফিরে বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সই একটি বিশাল অর্জন। এটি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে।

সর্বশেষ খবর