শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নৌকা-ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

নৌকা-ধানের শীষ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই

ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফরিদপুর-৪ (সদরপুর-ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন) আসনটিতেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ আসনে মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক এমপি কাজী জাফরউল্লাহকে হারিয়ে চমক দেখান। তবে এবারও নিক্সন চৌধুরী মাথাব্যথার কারণ হতে পারেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর।

এ আসনের তিনটি উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের দলাদলি বেশ চাঙ্গা। আওয়ামী লীগের একটি অংশ স্বতন্ত্র এমপি নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে রয়েছে। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও এবার প্রার্থী তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকজনের নাম। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পাল্লা দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের নির্বাচনী প্রচারণা।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে এ আসনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এখনো এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের আর কোনো প্রার্থীকে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। বিএনপির হয়ে প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী।

ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে এ আসনে বেশির ভাগই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তবে দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে ভোট বাড়িয়েছে বিএনপি। গত নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া এবং আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের সুযোগে জয়ী হয়েছিলেন নিক্সন চৌধুরী। গত নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরী পান ৯৮ হাজার ৫৯৪ ভোট। আর কাজী জাফরউল্লাহ পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৮৪ ভোট। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ আসনের তিনটি উপজেলার মধ্যে ভাঙ্গা ও সদরপুরে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। আর চরভদ্রাসন উপজেলায় বিএনপির ভোট বেশি। গত নির্বাচনের সময় দলীয় কোন্দলের কারণে কাজী জাফরউল্লাহর ভরাডুবি হলেও এবার কোন্দল মেটাতে ইতিমধ্যেই তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। তাছাড়া ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল্যায়ন করে কাছে টেনে নিচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, গত নির্বাচনে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং কাজী সাহেবের কাছের কতিপয় ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মানুষ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের কয়েকজনকে সরিয়ে দেওয়ায় এবার কাজী সাহেবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তবে এখনো তার সঙ্গে দু-একজন রয়েছেন, যাদের সরিয়ে দেওয়া না হলে আগামীতেও আওয়ামী লীগকে লজ্জায় পড়তে হতে পারে। তারা জানান, দীপক মজুমদার নামের এক ব্যক্তির কারণে কাজী পরিবার এবং আওয়ামী লীগের দুর্নাম হচ্ছে। তাকে দ্রুতই সরিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া দলের অনেক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র এমপির কাছে চলে গেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।

এ এলাকার ভোটার কিংবা জন্মস্থান না হলেও নির্বাচনে জিতে চমক দেখান পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার শিবচরের মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ফরিদপুর-৪ আসনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। এলাকার সর্বস্তরের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিবিড়। এমপি হয়েও গাড়ির বহর না নিয়ে তিনি মোটরসাইকেল কিংবা হেঁটে বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করেন। আওয়ামী লীগের একটি বিক্ষুব্ধ অংশ এবং বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী তার পক্ষে কাজ করছেন। ফলে আগামী নির্বাচনে তিনি বেশ ভালো অবস্থানেই রয়েছেন বলে মনে করেন ভোটাররা।

ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপি তেমন শক্তিশালী না হলেও ক্রমান্বয়ে দলটির ভোট বেড়েছে। বিগত দিনে এ আসনটি শুধু ভাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত থাকার কারণে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল একক। কিন্তু ২০০৮ সালে ভাঙ্গার সঙ্গে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা যোগ হওয়ায় বিএনপির প্রচুর ভোট বেড়েছে। বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম। কয়েক মাস ধরে তিনি এ আসনের তিনটি উপজেলা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম থেকে শুরু করে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, ঈদ ও পূজায় অসহায় মানুষকে সাহায্য বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ইকবাল হোসেন সেলিম জানান, তিনি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এলাকায় থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। নানা বাধার মুখেও গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি ৩০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে চমক দেখান। বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মনে করেন, আওয়ামী লীগের কোন্দলের সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে এ আসনে বিএনপির জয়ী হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাদের মতে, গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় স্বতন্ত্র এমপি জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সেই সুযোগ তিনি নাও পেতে পারেন। এ আসনে মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যেই। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ, জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, জাসাস কেন্দ্রীয় নেত্রী শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা। তবে এদের মধ্যে কেবল শায়লা মাঝেমধ্যে এলাকায় থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে এ আসনে আর কোনো দলের প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি। এ আসনে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সালের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি এখনো প্রচারণায় নামেননি।

সর্বশেষ খবর