বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বামীর পরকীয়ায় প্রাণ গেল স্ত্রী-কন্যার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন সান্ত্বনা আক্তার (২৫) ও তার দুই বছর বয়সী মেয়ে মাহফুজা। গতকাল সকালে আহমদবাগের ৩৬/৩-সি নম্বর টিনশেড বাড়ি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর পরকীয়ার জের ধরে রাগে-ক্ষোভে সান্ত্বনা তার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় সান্ত্বনার স্বামী মামুন মিয়া ও পরকীয়া প্রেমিকা স্বর্ণাকে আটক করেছে পুলিশ। সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কুদ্দুস ফকির বলেন, সকালে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ আহমদবাগের ওই টিনশেড বাড়িতে যায়। ঘরের দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিল। পরে দরজা ভেঙে সান্ত্বনা ও তার মেয়ে মাহফুজার লাশ উদ্ধার করা হয়। সান্ত্বনার লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলছিল এবং মাহফুজাকে মৃত অবস্থায় বিছানায় পাওয়া গেছে। ওসি বলেন, শ্যালিকা স্বর্ণার সঙ্গে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই দিন আগে তারা পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনা সান্ত্বনা মেনে নিতে পারেননি। এ কারণেই হয়তো মেয়েকে গলা টিপে খুন করে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সান্ত্বনার স্বামী মামুন ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া এবং ইলেকট্রনিক মিস্ত্রির কাজ করেন। ঘটনার পর গতকাল বিকালে উত্তরখান থেকে মামুন ও স্বর্ণাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় মামুন ও স্বর্ণাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সান্ত্বনার প্রতিবেশী আকলিমা বেগম ও রানা জানান, মামুন ও সান্ত্বনা টিনশেডের ওই বাসায় পাঁচ বছর ধরে ভাড়া থাকছেন। ওই দম্পতির এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। তিন-চার মাস আগে সান্ত্বনার সৎ বোন স্বর্ণা ওই বাসায় বেড়াতে আসেন। এক মাস আগে গার্মেন্টসে কাজও নেন স্বর্ণা। তারা সবাই একই কক্ষে থাকতেন। রবিবার শ্যালিকা স্বর্ণাকে নিয়ে পালিয়ে যান মামুন। এর পর থেকে সান্ত্বনা কান্নাকাটি করছিলেন ও হতাশায় ভুগছিলেন। ঘর ভাড়া কীভাবে দেবেন, কীভাবে মাহফুজাকে মানুষ করবেন, কীভাবে আগামী দিনগুলো কাটবে, বোন স্বর্ণা তার সঙ্গে এমন কেন করলেন, মানুষকে তিনি কীভাবে মুখ দেখাবেন ইত্যাদি ভেবে গুমরে গুমরে কেঁদেছেন সান্ত্বনা। চোখ ফুলে লাল হয়ে গিয়েছিল তার। মামুন ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন সান্ত্বনা। কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলতেন না তিনি। রান্না করতেন না। সোমবার রাত ১০টার দিকে সান্ত্বনার সঙ্গে প্রতিবেশীদের সর্বশেষ কথা হয়। গতকাল ভোরে শিশু মাহফুজার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলেও কারও কিছু মনে হয়নি। সকাল ৮টা বেজে গেলেও দরজা না খুললে তাদের সন্দেহ হয়। পেছন থেকে ঘরে উঁকি দিয়ে তারা সান্ত্বনার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। পরে খবর দিলে পুলিশ এসে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।

জানা গেছে, সান্ত্বনার মায়ের নাম আফরোজা আক্তার। তিনি দুই বিয়ে করেন। প্রথম ঘরের সন্তান সান্ত্বনা এবং দ্বিতীয় ঘরের সন্তান স্বর্ণা। মামুনের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা থানার চন্দ্রিপুরে এবং সান্ত্বনার বাড়ি গাইবান্ধায়। প্রতিবেশীরা বলছেন, ‘মামুনের পরকীয়াই সান্ত্বনার জীবনে কাল হয়ে এসেছে। মামুন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন। তার ফাঁসি হওয়া উচিত।’

 

সর্বশেষ খবর