বুধবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

যানজটে নাকাল বগুড়া শহর

টাকা নিয়ে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশ, মোড়ে মোড়ে সিএনজি স্ট্যান্ড

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, বগুড়া থেকে

যানজটে নাকাল উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর বগুড়া। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেন যানজট লেগেই থাকে এই শহরে। ছোট-বড় গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং ও প্রধান সড়কের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাথে দোকান, মোড়ে মোড়ে সিএনজি ও অটোরিকশার অস্থায়ী স্ট্যান্ডের কারণে শহরটিতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বগুড়া শহরবাসী। দিনের অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে থমকে যায় তাদের জীবন। বগুড়া শহরের প্রবেশদ্বারের সবকটি পথে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো, সিএনজি ও মিনিবাসের দাপট বেশি। শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ২ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ঘণ্টার বেশি। শহরবাসী জানায়, ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলেই শহরকে যানজটমুক্ত করতে পারে। কিন্তু এরা যানজট নিরসনের চেয়ে সিএনজি, ব্যাটারি রিকশা, অটো ও অনুমোদনহীন গাড়ি থেকে টাকা আদায়েই ব্যস্ত থাকেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক বিকর্ণ কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ট্রাফিক পুলিশে জনবল কম হওয়ায় ব্যস্ততম শহর বগুড়ায় মাঝে-মধ্যে একটু যানজট লেগে যায়। তিনি আরও বলেন, যানজটের মূল কারণ লেভেল ক্রসিং। দিনে ১১ বার লেভেল ক্রসিংয়ে ৩০ মিনিট করে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। ফলে যানজট পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। সরেজমিন দেখা যায়, বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে দক্ষিণে চার লেনের শেরপুর রোডের দুই লেনই দখলে মিনিবাস, সিএনজি, অটো, ব্যাটারি রিকশার। মাঝে-মধ্যে এসব ছোটবড় গাড়িগুলো আড়াআড়ি করে রাখা থাকে। এতে সড়ক দিয়ে অন্য গাড়ি যেতে পারে না। এই সড়কের মফিজ পাগলা মোড়, ঠনঠনিয়া, পিটিআই, সরকারি কলেজ, ইয়াবুবিয়া স্কুল মোড় এলাকায় অস্থায়ীভাবে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে সাতমাথা থেকে পশ্চিমে স্টেশন রোডের চার লেনের দুই লেনই দখলে সিএনজি ও মিনিবাসের। এর চেয়ে ভয়াবহ চিত্র সাতমাথা থেকে উত্তরের চার লেন সড়কে। সিএনজিচালক জামান বলেন, ভাই আমাদের কী দোষ। ট্রাফিক পুলিশ ও নেতারা সড়কের ওপরই আমাদের স্ট্যান্ড বানিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছি ও ওঠাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা আখরুজ্জামান বলেন, ব্যস্ততম এই শহরে এত রিকশা, অটো চলে যে আমরা সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পারি না। বগুড়া শহরের মূল পয়েন্ট দিয়ে ঢাকা টু উত্তরাঞ্চলের একটি রেলপথ রয়েছে। আর এই রেলপথ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ বার ট্রেন আসা-যাওয়া করে। আর এই আসা-যাওয়ায় প্রতিবার সড়কের সিগন্যালগুলোতে ৩০ মিনিট বন্ধ থাকে। বিশেষ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ বার সিগন্যালে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। উত্তরাঞ্চলের ১১ জেলার প্রবেশপথ হওয়ায় বগুড়া শহর সব সময় ব্যস্ত থাকে। এ অঞ্চলের ১৬ জেলার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর বগুড়া। দিনে ৩-৪ লাখ মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই শহরে আসা-যাওয়া করছে। শহরের চারপাশের বাইপাস সড়ক পথে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে। এর ফলে শহরের ভিতরে ও বাইরে যানজট লেগেই থাকে। শহরের মধ্যে দিনরাত মালবাহী ট্রাক ও দিনের বেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাড়ি যাতায়াতের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে পার্কিং করায় যানজট বাড়ছে। শহরের দত্তবাড়ি, বড়গোলা, থানা মোড়, সাতমাথা, ইয়াবুবিয়া স্কুল মোড়, কয়েকটি রেলগেট, নামাজগড়, টিনপট্টি মোড়, বনানী মোড়, তিনমাথা রেলগেট, চেলোপাড়া মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। এসব পয়েন্টে মাত্র কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। এ ছাড়া বাইপাস রোডে যানবাহনের চাপে যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে প্রথম বাইপাস রোডের তিনমাথা রেলগেট ও আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন চারমাথা, বনানী, মাটিঢালী এলাকায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে দ্বিতীয় বাইপাস রোডে যানবাহন নিয়মিত না চলার কারণে সেখানে যানজট নেই। যানজটের ভোগান্তিতে শহরের সাতমাথা থেকে বনানী যার নাম শেরপুর রোড— এ রোডে ছয় মিনিট পরপর শেরপুরগামী লোকাল বাস, গেটলক বাস ছাড়ে সাতমাথা মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে। শুধু তাই নয়, শেরপুর থেকে ছেড়ে আসা এসব গাড়ি সাতমাথা দিয়ে টার্নিং হয়ে আবারও শেরপুরের দিকে যায়। এতে সাতমাথামুখী রোডে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। মাঝে-মধ্যে সাতমাথায়ই গাড়ি থামিয়ে যাত্রি ওঠানামা করে। এ ছাড়া এই সাতমাথা সংলগ্ন কয়েকটি স্পটে সিএনজি, অটোরিকশার অঘোষিত স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব কারণে এই রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে জ্যাম স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের সাতমাথা, শেরপুর রোড, গোহাইল রোড, স্টেশন রোড, ভিএম স্কুল, দত্তবাড়ী, চেলোপাড়া এলাকা থেকে সিএনজি, অটো ও মিনিবাস স্ট্যান্ডসহ কোচ টার্মিনাল দূরে সরিয়ে নিলেই শহরের যানজট লাঘব হবে। বগুড়া ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক বিকর্ণ কুমার চৌধুরী বলেন, যানজটমুক্ত বগুড়া করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর