শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রান করতে না পারায় স্কুল ছাত্রকে নৃশংস হত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিদিনের মতো বুধবার বেলা ১১টায় স্কুল শেষে বাসায় ফিরে নাহিন আহমেদ (৭)। পোশাক পরিবর্তন করেই বাসার সামনে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠে সে। একপর্যায়ে প্রতিবেশী মশিউর (১৮) তার সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কথা বলে তাকে ভাটারা এলাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু ব্যাটিং করতে গিয়ে শত চেষ্টা করেও ব্যাটে বল লাগাতে পারছিল না নাহিন। পারবে কীভাবে? তার বয়স তো মাত্র ৭! ভালো করে ব্যাটও ধরতে শেখেনি সে। তাতে কিছু আসে যায় না মশিউরের। রান করতে না পারাটাই মশিউরের কাছে নাহিনের অপরাধ। তাই খেলা শেষে ক্ষোভে ইট দিয়ে নাহিনের মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করে মশিউর। পরে লাশটি বাড্ডার আফতাবনগর কাশবনে ফেলে যায় এই ঘাতক। বুধবার রাতে নাহিনের লাশ উদ্ধার করে মশিউরকে গ্রেফতারের পর এভাবেই হত্যার স্বীকারোক্তি দেয় সে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে পরিবারের অভিযোগ, মশিউর নাহিনকে অপহরণ কিংবা পাচার করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর নেপথ্যে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই আবদুল করিম জানান, শিশুটির মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে  ইট দিয়ে থেঁতলানো জখম রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা একটি মামলা করেছেন।

 গতকাল মশিউরকে আদালতে হাজির করলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ক্রিকেট খেলা না পারার অজুহাতেই নাহিনকে মশিউর হত্যা করেছে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মাত্র সাত বছর বয়সী নাহিন বড়দের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবে, এটা অযৌক্তিক। তাছাড়া মশিউর ভাটারা যে মাঠের কথা বলছে, সেটা মূলত রাস্তা। কাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল সেটাও বলছে না। পরিবারের অভিযোগ, মশিউর নাহিনকে অপহরণ কিংবা পাচার করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর নেপথ্যে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।

শিশুটির চাচা মোবারক হোসেন জানান, নরসিংদীর বেলাব থানার নোয়াকান্দি গ্রামের হিরণ মিয়ার ২ ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে নাহিন মেজ। পরিবারের সঙ্গে ভাটারা কুড়িল বিশ্বরোড মিয়া বাড়ির ক-১২৬ নম্বর বাসায় থাকত। শেরে বাংলা আইডিয়াল হাই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। বুধবার বেলা ১১টার পর নাহিনকে না পেয়ে মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়। পরে মশিউরের মা জানান, নাহিনকে তার ছেলের সঙ্গে দেখেছেন, ওর সঙ্গেই আছে।

মোবারক হোসেন জানান, বিকাল ৫টার দিকে মশিউর এলাকায় আসে। এ সময় তার পরনের প্যান্ট উল্টো করে পরা ছিলে। এতে রক্ত মাখা ছাপ দেখে সবার সন্দেহ হলে আটকিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন সে জানায়, খেলার সময় আহত একজনকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার সময় তার প্যান্টে রক্ত লেগেছে। পরে খবর দিলে পুলিশ মশিউরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে নাহিনকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড্ডার কাশবাগান থেকে নাহিনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ খবর