সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাবি ক্যাম্পাসে দিনভর উত্তেজনা শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ধর্মঘট আজ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে গতকাল উত্তেজনাপূর্ণ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনের সময় উপাচার্য ও প্রক্টর অফিস ভাঙচুর এবং উপাচার্যের সঙ্গে অশোভন আচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ডুটা)। আবার আন্দোলনের দিন বাম নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজকে ছাত্র ধর্মঘটকে সফল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন জোট নেতারা। এ ছাড়া হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা’। সকালে অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধন থেকে উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করা ও তার কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনাকে জাতীয় নির্বাচনের আগে ষড়যন্ত্রের রিহার্সেল বলে দাবি করেন ডুটা সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা ও ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্র ভিতর থেকে বা বাইরে থেকেও হতে পারে। ভিতরে অনেক ছাত্র সংগঠন আছে, তাদের মদদদাতা শিক্ষক রয়েছেন। আমরা এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেব না। তিনি বলেন, দাবি থাকলে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের যে বেপরোয়া মনোভাব দেখেছি, তাতে ধারণা করছি প্রশাসনকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ কেন ডাকেনি— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ক্যাম্পাসের কালচার হলো পুলিশ আসলে তখন শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়— ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, প্রশাসন জবাব দাও। তবে আন্দোলনকারীদের ভাঙচুর যেমন কাম্য নয় ঠিক তেমনি তাদের ওপর হামলা করতে অন্য ছাত্র সংগঠনের আসাও কাম্য নয়। উপাচার্য কার্যালয়ে ভাঙচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম মানববন্ধনে বলেন, তদন্তের মাধ্যমে আমরা যৌন নিপীড়ন কারীদেরও বিচারের আওতায় আনব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছে— গণমাধ্যমে এমন সংবাদের প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ঢাবিতে কোনো পেছনের দরজা নেই, আবার সামনের দরজাও নেই। মানববন্ধনে অধ্যাপক কবি মুহাম্মদ সামাদ, সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, অধ্যাপক জিনাত হুদা, অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বক্তব্য রাখেন।

এদিকে, উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির দিন বাম নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়। সমাবেশ থেকে আজকের ধর্মঘট সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগের হামলা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ‘নিপীড়নবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা’। এতে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ বামনেতারাও অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সেটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ডাকসু ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। অন্যদিকে, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ঢুকতে পারে—এমন খবরের ভিত্তিতে ভোর থেকে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। ছাত্রদলকে প্রতিহত করতে বিভিন্ন হলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়, কার্জন হল, শহীদ মিনার, নীলক্ষেত, পলাশীসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। তাদের সেই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতেই আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম।

সর্বশেষ খবর