রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

জমেছে পাঠকের আনাগোনা

মোস্তফা মতিহার

জমেছে পাঠকের আনাগোনা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮-তে গতকাল পর্যন্ত সর্বমোট ৪৭৫টি নতুন বই প্রকাশিত হলেও বিক্রির হার আশাব্যঞ্জক ছিল না। তবে পাঠকের আনাগোনা প্রতিদিনই বেড়েছে। গতকালও মেলা জমজমাট ছিল নানা বয়সী নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরের ভিড়ে। তৃতীয় দিনে হুমায়ূন আহমেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, গুলতেকিন খান ও সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা সিরিজের বইগুলো বেশি বিক্রি হয়েছে। অন্যপ্রকাশের জনসংযোগের দায়িত্বরত আলাউদ্দিন টিপু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এবারও বিক্রয়ের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদই সেরা। তাদের প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত নন্দিত এই লেখকের পুরনো বই ‘দেয়াল’ বিক্রয়ের দিকে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর পরে রয়েছে লেখকের অন্য বই জোছনা ও জননীর গল্প, হিমু-১০, মিসির আলী-১০, শঙ্খনীল কারাগার ইত্যাদি। অন্যদিকে কাকলীর স্বত্বাধিকারী নাছির আহমেদ সেলিম জানান, হুমায়ূন আহমেদের পুরনো বইগুলোই তার স্টলে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে লেখকের ‘শ্রেষ্ঠ হিমু’, শ্রেষ্ঠ মিসির আলী সংকলন, আমার ছেলেবেলা ও মিসির আলী আনসোলভড। পাশাপাশি এই প্রকাশনা থেকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের পুরনো বই ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘তিতুনি এবং তিতুনি’, ‘একটুখানি বিজ্ঞান’, ‘আরো একটুখানি বিজ্ঞান’ এবং সুমন্ত আসলামের ‘তুমি আছো তাই’ ভালো বিক্রি হয়েছে। তাম্রলিপিতে বিক্রয়ের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোর উপন্যাস ‘সাইক্লোন’, গুলতেকিন খানের প্রথম উপন্যাস ‘চৌকাঠ’। তাম্রলিপির প্রকাশক এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি জানান, জাফর ইকবালের ‘সাইক্লোন’ বইটি এবারের মেলায়ও বেস্ট সেলার হিসেবে বিবেচিত হবে। বইপ্রেমীদের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সফলতার দিক থেকে এবারের মেলা বিগত বছরগুলোর সব মেলাকে ছাড়িয়ে যাবে। দুই ভাই হুমায়ূন আহমেদ ও জাফর ইকবাল ছাড়াও সেবা প্রকাশনীর বইগুলো বরাবরের মতো এবারও বেশি বিক্রি হচ্ছে। সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে সেবা প্রকাশনীর সামনে বইপ্রেমীদের সুশৃঙ্খল দীর্ঘ সারি দেখে।

এই প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক মমিনুল ইসলাম জানান, তাদের ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের নতুন বই ‘নরপশু’ এবারের মেলায় বিক্রয়ের দিকে শীর্ষস্থান অর্জন করবে। এ ছাড়া তাদের অন্য বই ‘তিন গোয়েন্দা ভলিউম-১৪৪’, ‘লাইট এ লিসবন’, ‘শ্যাডোস ইন প্যারাডাইস’, বইগুলোও খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও সেবা প্রকাশনী তাদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন মমিনুল ইসলাম।

এদিকে গতকাল মেলায় এসেছিলেন গুলতেকিন খান। তাম্রলিপি প্রকাশনা সংস্থার সামনে বসে তিনি নিজের প্রথম উপন্যাস ‘চৌকাঠ’ বইটির ওপর অটোগ্রাফ দেন। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। নিজের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট নিয়ে গুলতেকিন খান বলেন, ‘সমাজের একটা চিত্র পাওয়া যাবে এ উপন্যাসে। সব মানুষ একটা বৃত্তের নির্দিষ্ট চৌকাঠের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কেউ কেউ চৌকাঠ ভেঙে বাইরে যেতে পারেন, আবার কেউ কেউ চৌকাঠ ভাঙতে পারেন না। এ বিষয়টিই চৌকাঠ উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে।’ বইটির সফলতা নিয়েও দারুণ আশাবাদী গুলতেকিন খান।

গতকাল মেলার দ্বিতীয় ছুটির দিনের প্রথম শনিবার ছিল মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর। ছুটির দিন হওয়ায় এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় এবং শেষ হয় রাত ৯টায়। এদিনের বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা শিশুপ্রহরে দুরন্তপনায় মেতে ওঠে শিশুরা। এ সময় বাবা-মায়েরাও শিশুদের আবদার রাখতে গিয়ে ডায়নোসরের বই, কার্টুন, কমিকস ও ছবি আঁকার বই কিনে দেন। এই প্রহরে সিসিমপুরে হালুম, ইকরি, শিকু, টুকটুকিদের নাচ দুষ্টুমিতে মেতে থাকে ছোট্ট সোনামণিরা।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যমতে, গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে গতকাল ১২০টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে গল্প ১১টি, উপন্যাস ১৯টি, প্রবন্ধ ১৩টি, কবিতা ২৬টি, গবেষণাগ্রন্থ ৩টি, ছড়া ৪টি, শিশুসাহিত্য ৬টি, জীবনী ৫টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ৪টি, নাটক ১টি, বিজ্ঞানবিষয়ক বই ৭টি, ভ্রমণকাহিনী ৪টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্যবিষয়ক ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি। অন্যান্য বিষয়ের ওপর ১৫টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ইন্তামিন প্রকাশনী প্রকাশিত শওকত আলীর ‘শুধু কাহিনী’, নঈম নিজামের ‘রংমহল’ প্রকাশ করেছে অন্বেষা প্রকাশন। অনন্যা এনেছে ইমদাদুল হক মিলনের ‘ভূতে নিল ইলিশ মাছ’। আদর্শ প্রকাশনী এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘সময় অসময়’। সময় এনেছে আনিসুল হকের ‘ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা’ ও সেলিনা হোসেনের ‘আপন আলোয় দেখা’। তারিক-উল-ইসলামের ‘কী কহ পাখি’ প্রকাশ করেছে যুক্ত।

মূল মঞ্চ : গতকাল তৃতীয় দিনে বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শফিউল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মো. মনিরুল ইসলাম ও সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাজী রফিকুল আলম। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফাতেমা-তুজ-জোহরা, সুজিত মোস্তফা, এ কে এম শহীদ কবীর পলাশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর