বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সশস্ত্র বাহিনী আজ উন্নত ও দক্ষ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রতিদিন ডেস্ক

সশস্ত্র বাহিনী আজ উন্নত ও দক্ষ

গতকাল মিরপুর সেনানিবাসে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কর্মকর্তাদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তাঁর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকের সশস্ত্র বাহিনী অনেক বেশি উন্নত, দক্ষ ও চৌকস। তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করায় এমনটা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০১৭-১৮ কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। খবর বাসস। গতকাল সকালে রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্টের ডিএসসিএসসিতে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুল্লাহিল বাকি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। এ সময় মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের    ভাইস চ্যান্সেলর, কূটনীতিক এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত নয় বছরে আমরা সশস্ত্র বাহিনীগুলোয় আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির সমন্বয় ঘটিয়েছি। এ পদক্ষেপগুলোর কারণেই আজ সশস্ত্র বাহিনীগুলো অধিকতর উন্নত, দক্ষ ও চৌকস হয়ে উঠেছে।’ প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূর্তপ্রতীক উল্লেখ করে বলেন, দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলায় এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রশংসা ও সুনাম অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা, গণতন্ত্রে উত্তরণ, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসহ পুনর্গঠন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের সাফল্যে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রতিরক্ষানীতির অনুসরণে তাঁর সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। বঙ্গবন্ধু ছয় দফায় ১৯৬৬ সালেই পূর্ব বাংলায় নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপনের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে আইনি প্রক্রিয়ায় জয়লাভ করে বিশাল সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাময় দুয়ার। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে এফ-৭ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। বিমানবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইউনিট, বৃদ্ধি পেয়েছে জনবল। বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজার বিমানঘাঁটি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই কলেজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এক অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৪২, নৌবাহিনীর ৩৬ ও বিমানবাহিনীর ৩৮টি স্টাফ কোর্স সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ৬৬ জন অফিসারও এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তারা সবাই নিজ নিজ দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এই সাফল্যের জন্য তিনি কলেজের কমান্ড্যান্ট, অনুষদ সদস্য ও সব অফিসারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি আস্থা প্রকাশ করে বলেন, সমরবিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালনে এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে। শুধু তাই নয়, এখন থেকে আরও বড় পরিসরে নেতৃত্ব প্রদানে আপনারা নিজেদের প্রস্তুত রাখবেন। এ বছর মোট সাতজন মহিলা অফিসার গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মহিলা অফিসারের কোর্সে অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এটি সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।

গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের স্ত্রীরা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গঠনমূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ায়ও সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর