বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চাই

সাক্ষাত্কারে সুইস প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে

জুলকার নাইন

বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চাই

সংকটময় সময়ে পাশে থাকাটাই বন্ধুত্ব। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সেটাই করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশ পুরো বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে সংকটে কীভাবে পাশে থাকতে হয়। নিজের সামর্থ্যকে ছাড়িয়ে গিয়ে কীভাবে অন্যের উপকার করা যায় তার উদাহরণও তৈরি করেছে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার। বাংলাদেশের এই মানবিক ভূমিকায় সুইজারল্যান্ড বিমোহিত। এই সংকট মোকাবিলায় সুইজারল্যান্ড সর্বাত্মকভাবে পাশে থেকে বাংলাদেশকে সাহস জোগাতে চায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ নামের মানবিক রাষ্ট্রটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায় সুইজারল্যান্ড। সেটা আন্তর্জাতিক সব প্লাটফর্মেই। এই বার্তা দিতেই আমার ঢাকায় আসা। চার দিনের সফরের শেষ দিনে গতকাল সকালে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে নিজের স্যুটে বসে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এসব কথা বলেন। পরে দুপুরে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন সুইস প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সুইজারল্যান্ড গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে চায় উল্লেখ করে সুইস প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে। এখানকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্রমবর্ধমান। আশা করা হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করতে প্রয়োজন ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোড়দার করা। এ জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এই যোগাযোগ বাড়াতে ইতিমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট। পৃথিবীর স্বর্গ হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত রবিবার বাংলাদেশে আসা আঁলা বেরসে কক্সবাজার গিয়ে সরেজমিন দেখেছেন রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি। মিয়ানমারে নির্যাতনের কথা শুনেছেন রোহিঙ্গাদের মুখ থেকেই। সে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমার কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে উদগ্রীব হয়ে আছি। কারণ ক্যাম্পগুলো সত্যিই বিশাল, সেখানে কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আমি জানাতে চাই, রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও এ দেশের জনগণের সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার কথা। কক্সবাজারের হাসপাতালে একেকজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা আসামাত্র সেখানকার চিকিত্সক ও কর্মীরা যে মমতায় তাদের সেবা করছেন তা আমি বিশ্বকে জানাতে চাই। এটা সত্যিই অসাধারণ। এটা অনন্য এক উদাহরণ। তিনি বলেন, ৬ লাখ ৮৮ হাজার শরণার্থীর এই ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা সত্যিই বাংলাদেশের জন্য বড় চাপ। আমি মনে করি এই চাপ পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর। সবাইকে এটি ভাগ করে নিতে নিজ নিজ সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে হবে। কারণ কক্সবাজারে যা দেখেছি, তাতে আমি সত্যিই আসন্ন মৌসুম নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বর্ষা মৌসুমে সাইক্লোনসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যেন দুর্যোগ না নেমে আসে সে বিষয়টিকেই এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বিপদগ্রস্ত এই মানুষগুলোকে নতুন করে যেন বিপদে না পরতে হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সত্যি সত্যিই তাদেরকে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা করাটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেই আমার ধারণা। ইতিমধ্যেই যেসব সাহায্য ও স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছেন তাদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের সহযোগিতার পরিধি আরও বাড়ান। সে জন্য যা প্রয়োজন, তা করুন। আপনারা এই মহতী উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকারকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহায়তা করুন।

সুইস প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি খুবই ভাগ্যবান যে, কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা জানাতে পেরেছি। সুইজারল্যান্ড আগের সহায়তা হিসেবে দেওয়া ৮ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁর সঙ্গে আরও ১২ মিলিয়ন ফ্রাঁ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রোগ্রামের আওতায় কাজ করতে সুইজারল্যান্ড থেকে পাঁচজন বিশেষজ্ঞকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তারা সরাসরি ক্যাম্পগুলোতেই কাজ করছেন। আমি মনে করি না, এখানেই শেষ। আমরা আরও নানান ভাবে পাশে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ। রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমারে নির্যাতিত মানুষগুলোকে আশ্রয়, বাসস্থান ও খাবার দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করার পাশাপাশি তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফেরত পাঠাতে নেওয়া উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন অতিথি প্রেসিডেন্ট। সুইজারল্যান্ডের নবীনতম এই রাষ্ট্রপতি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের চুক্তি স্বাক্ষরকে আমরা (সুইজারল্যান্ড) ইতিবাচকভাবেই দেখছি। আশা করছি খুব শিগগিরই নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবেন এই হতভাগা মানুষগুলো। তবে এক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ড জোর গলায় দাবি জানাচ্ছে যে, রোহিঙ্গাদের এই প্রত্যাবাসন অবশ্যই হতে হবে স্বেচ্ছায়, যথাযথ মর্যাদাসম্পন্ন এবং নিরাপদ। সুইজারল্যান্ড বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ তাদের এই আস্থা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে। সংকট সমাধানের জন্য, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই কফি আনান কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। আর তা করতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করাটা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়।

সর্বশেষ খবর