বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আশা দেখছেন প্রকাশকরা

মোস্তফা মতিহার

আশা দেখছেন প্রকাশকরা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে এখন উত্তাল রাজধানীর অলিগলিসহ সারা দেশ। আজ ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে জনগণের মনে যতটা আগ্রহ রয়েছে বিপরীতে উত্কণ্ঠা, উদ্বেগ ও আতঙ্কও ঠিক ততটাই। তবে একুশের চেতনায় ঋদ্ধ গ্রন্থমেলায় এই আলোচনার ছিটেফোঁটাও নেই। কারণ বই হচ্ছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। গতকাল মেলার সপ্তম দিনে সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সব উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা আর আতঙ্ককে পাশ কাটিয়ে বইয়ের প্রতিই মনোনিবেশ করেছে বইপ্রেমীরা। গতকাল মেলার প্রথম সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ সপ্তম দিনে ছিল বইপ্রেমীদের আশানুরূপ ভিড়। এ দিন বেশির ভাগ দর্শনার্থীই স্টল ঘুরে ঘুরে এ বছরের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছে। তবে অনেকে আবার প্রিয় লেখকের বইটি কিনেই বাড়ি ফিরেছে। পাঠকদের পছন্দের তালিকায় বরাবরের মতোই ছিল হুমায়ূন আহমেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সৈয়দ শামসুল হক, সুমন্ত আসলাম, তিন গোয়েন্দা সিরিজের বই। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যমতে, গতকাল সপ্তম দিন পর্যন্ত মোট বই প্রকাশিত হয়েছে ৭২৯টি। এর মধ্যে গল্প ৮২টি, উপন্যাস ১২৯, প্রবন্ধ ৪৬টি, কবিতা ২১০, গবেষণা ১৯, ছড়া ১৫, শিশুতোষ ২২, জীবনী ১৭, রচনাবলি ২, মুক্তিযুদ্ধ ১১, নাটক ৭, বিজ্ঞান ১৮, ভ্রমণ ১৮, ইতিহাস ১৭, রাজনীতি ৪, চিকিত্সা স্বাস্থ্য ৬, রম্য/ধাঁধা ২, ধর্মীয় ৫, অনুবাদ ৭, অভিধান ৩, সায়েন্সফিকশন ১৫, অন্যান্য ৭৪টি। এর মধ্যে গতকাল সপ্তম দিনে প্রকাশিত হয়েছে ১৯০টি বই। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত ৭২৯টি বই প্রকাশিত হলেও প্রকাশকের হিসাব মতে সপ্তম দিন পর্যন্ত বই প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৩০টি।  গতকাল প্রকাশিত ১৯০টি বইয়ের মধ্যে গল্প ২৩টি, উপন্যাস ৪১টি, প্রবন্ধ ৭টি, কবিতা ৬৪টি, গবেষণা ৬টি, ছড়া ৩টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ৩টি, অনুবাদ ৩, অভিধান ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, সায়েন্সফিকশন ৬টি, ইতিহাস ৩টি, রাজনীতি ৩টি, চিকিত্সা ১, রম্য/ ধাঁধা ১, ধর্মীয় ২ ও অন্যান্য ১৫টি। গতকাল প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো ঐতিহ্য প্রকাশিত জুননু রাইনের কাব্যগ্রন্থ ‘এয়া’, অনুপম এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘বড় হবে ঝিলমিল’, অবসর এনেছে হুমায়ূন আহমেদের ‘সেরা সাত ভৌতিক উপন্যাস’, একই প্রকাশনী থেকে এসেছে বেগম আকতার কামালের ‘নজরুল দৃষ্টি ও সৃষ্টি’, শিকড় এনেছে আহসান হাবীবের ‘শ্রডিঙ্গারের জেব্রা’, আগামী এনেছে নাসরীন জাহানের ‘সেরা গল্প’, অনিন্দ্যপ্রকাশ এনেছে আহমদ রফিকের ‘সংস্কৃতি কথা যুক্তিবা মুক্তচিন্তা’, দ্বিজেন শর্মার ‘নিসর্গ কথা’, রোদেলা এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘ভূতের নয় ভবিষ্যতের’, জোনাকী এনেছে খিলখিল কাজীর ‘কাজী নজরুল ইসলামের পঞ্চকাব্য’, বিজয়প্রকাশ থেকে তারিক সজীবের ‘কোথায় পাব মনের মানুষ’। সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, সাত দিনের হিসাবে মেলা তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। অন্যান্য বারের চেয়ে বইপ্রেমীরা বেশি আসছে ঠিকই কিন্তু দর্শনার্থীদের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। এবার প্রথম সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন প্রথম শুক্রবার মেলা অনেকটা ফিকে ছিল। তবে এই কয়েক দিন সেই ভিড় তুলনামূলকভাবে একটু কম। আগামী শুক্রবার থেকে মেলা পুরোপুরি জমে উঠবে। কারণ শুক্র ও শনিবার দুই দিন ছুটির দিনের পর পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস আসবে যার কারণে মেলা আগামী সপ্তাহেই সফলতার পথে পা বাড়াবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের রায় নিয়ে রাজধানীসহ দেশজুড়েই উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা।

 সেই উত্কণ্ঠা মেলায় কতটুকু আতঙ্কের সৃষ্টি করবে এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদ আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক কোনো উত্তাপ কখনই মেলায় প্রভাব ফেলতে পারেনি, আশা করি এবারও পারবে না। বইয়ের টানেই বইপ্রেমীরা মেলায় ছুটে আসবে। ফরিদ আহমেদ কথা প্রসঙ্গে জানান, তার প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত জাফর ইকবালের ‘ত্রাতিনা’ বইটি এবারের মেলায় বেস্ট সেলার বই হিসেবে বিবেচিত হবে। এই বইটি পাঠকদের কাছে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সমাদর অর্জন করছে। তাম্রলিপির প্রকাশক এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, কয়েক দিনের হিসাবে এবারের মেলা তার নিজস্ব গতিতেই চলছে। তবে অন্য বারের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এবারের প্রথম সপ্তাহে মেলায় লোকসমাগম অনেকটা বেশি। তবে আগামী সপ্তাহে বিক্রি বাড়বে বলে জানান তাম্রলিপির স্বত্বাধিকারী। পরিসর বেশি, নতুন বইয়ের সংখ্যা বেশি, প্রকাশকদের অংশগ্রহণও বেশি। সবকিছু মিলিয়ে এবারের মেলায় বইপ্রেমীদের উপস্থিতিটাও তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে বাংলা একাডেমির অব্যবস্থাপনা নিয়েও এ সময় অভিযোগ করেন এই প্রকাশক। তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, মেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করতে পারেনি বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া ডাস্টবিন নেই, স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্দেশিকা নেই। প্রকাশকদের ওপর বইমেলা পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দিলে মেলা আরও বেশি গোছালোভাবে সম্পন্ন হবে বলেও মনে করেন রনি। এ সময় তিনি মেলাকে প্রকাশকদের দায়িত্বে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।

মূল মঞ্চ : গতকাল বিকালে বইমেলার মূল মঞ্চে ‘কবি আবদুল গফ্্ফার দত্ত চৌধুরী’ শিরোনামে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুভেন্দু ইমাম। অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আলী মোস্তফা চৌধুরী, জফির সেতু ও মোস্তাক আহমাদ দীন। সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কান্তা নন্দী, নূরুল ইসলাম, নবনীতা রায় বর্মণ ও সঞ্জয় কুমার দাস।

‘ভালবাসার শিকড়ে সমর্থ বৃক্ষের গান’ : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশার কাব্যগ্রন্থ ‘ভালবাসার শিকড়ে সমর্থ বৃক্ষের গান’ প্রকাশ করেছে এডর্ন পাবলিকেশন্স। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে দেশের স্বনামধন্য কবি এবং বিশ্বকবি সম্মেলনে যোগদান করতে আসা ছয়জন বিদেশি কবির উপস্থিতিতে বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়। বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে এই কবি সেনা শৃঙ্খলায় থাকলেও তিনি কবিতা লিখেছেন। এই ৩০ বছরে পৃথিবী বদলেছে বিস্তর। কবির প্রকাশের দক্ষতা বেড়েছে অনুমেয়। তবে আদর্শের বিন্যাসে পরিবর্তনের সুচাগ্র স্পর্শ নেই। কাব্যগ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলার এডর্ন পাবলিকেনশন্স স্টলে (নং ২৭৭-২৮০)।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর