বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় আগ্রহ বস্তি শিশুদের

শিক্ষার হালচাল - ৫

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মহাখালীর সাততলা বস্তির বাসিন্দা সিয়াম। বয়স নয়ের কোটায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাহবাগে আর বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বরে ভিক্ষা করে সে। বস্তির এনজিও স্কুলে পড়াশোনা শুরু করার দুই মাস পার হতেই পড়ার পাট চুকিয়ে ভিক্ষায় পাঠিয়ে দেন বাবা। কারণ স্কুলে গেলে তো আর অর্থ উপার্জন হয় না। শুধু সিয়ামের নয়, এ চিত্র রাজধানীর বস্তির বাসিন্দা অধিকাংশ শিশুর।

সরেজমিন সাততলা বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের মাঠে খেলাধুলা করছে বেশ কয়েক শিশু। মাঠের পাশেই রোদে বসে খোশগল্পে মেতে রয়েছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। খেলা থামিয়ে পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে ২২ জনের মধ্যে ৩ জন জানায়, তারা এনজিও পরিচালিত প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে। বাকি ১৯ জনের মধ্যে ৭ জন বিভিন্ন দোকানে কর্মচারী হিসেবে অথবা হকারের কাজ করে। আর বাকি ১২ জনই ভিক্ষা করে। তাদের সঙ্গে নিয়ে বস্তির ভিতরে গেলে দেখা যায়, শুধু এ শিশুরা নয়, এরকম অসংখ্য শিশু আছে ভিক্ষায় জড়িত। যাদের বছরের শুরুতে নতুন বইয়ের পাতায় মুখ লুকানোর কথা তারা ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় পথে পথে। এসব শিশুর অধিকাংশেরই বয়স ১২-এর মধ্যে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সন্তানকে ভিক্ষায় পাঠানোর কারণ জিজ্ঞাসা করলে সিয়ামের বাবা মফিদুল মিয়া বলেন, দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর থেকে রিকশা নিয়ে বের হতে পারি না। ওর মায়ের একা কাজে সংসার চলে না। সিয়ামকে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু পড়াতে গেলে খরচ তো কমে না বরং বাড়ে। দোকানে কর্মচারীর কাজে বয়স অল্প হওয়ায় মাসে মাত্র ৩০০ টাকা বেতন দেয়। ওর বয়সী এই বস্তির অনেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে সিয়ামও মাঝে মাঝে ভিক্ষায় যায়। প্রতিদিন কম করে হলেও ১০০ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। শুধু সাততলা বস্তি নয়, এরকম অবস্থা রাজধানীর কড়াইল, কালশী, ভাসানটেক বস্তিরও। বস্তির শিশুরা অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ছে মাদক কেনাবেচা এবং সেবনেও। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠায় শিশুরা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের মুখোমুখি হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, বস্তির শিশু এবং ভাসমান শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয় সন্ত্রাসী চক্র এবং বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেট। এই শিশুরা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে। এসব শিশুর পরিবারকে শনাক্ত করতে হবে এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এসব শিশুর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয়দের সচেতন হতে হবে।  সমাজকল্যাণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে নিয়মিত ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। ঈদ বা উত্সবের মৌসুমে ঢাকার বাইরের ভিক্ষুকরাও এসে ভিড় করায় তা বেড়ে প্রায় এক লাখে দাঁড়ায়। তবে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত শিশুদের সংখ্যা নির্ণয়ে কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ভূঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  ‘বস্তি শুমারি ও ভাসমান লোকগণনা ২০১৪’ অনুযায়ী ডিএনসিসির আওতায় বস্তি আছে ১ হাজার ৬৩৯টি। বস্তির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ২০১২-১৫ সাল পর্যন্ত নগর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো বিষয়ে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। ঝরে পড়া শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে এবং ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে ১১০০-৬৩০০ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বস্তির শিশুদের শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের।

সর্বশেষ খবর