শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তা রাজধানীতে

যানবাহন না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কঠোর নিরাপত্তা রাজধানীতে

হেঁটে হেঁটে আদালতের দিকে যাচ্ছেন বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল, আমীর খসরু ও খন্দকার মোশাররফ (উপরে বামে)। নিচে খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি। কাকরাইল মোড়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন বিএনপি কর্মীরা (ডানে) —বাংলাদেশ প্রতিদিন

পুলিশ ও র‌্যাবের কঠোর নিরাপত্তায় গতকাল রাজধানীর রাস্তাগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা। যানবাহনে তল্লাশি আর ধরপাকড়ে পরিবহনের চরম সংকট দেখা দেয়। সড়কপথ ছাড়াও এদিন নৌপথের সব ধরনের পরিবহনেও তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের গন্তব্যে যাওয়ার সময় চরম দুর্ভোগে পড়েন। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বের হলেও পরিবহন না পেয়ে অনেককেই পায়ে হেঁটে স্কুল-কলেজে যেতে দেখা গেছে। তবে সবার মাঝে ছিল আতঙ্ক।  বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজধানীর প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশের তল্লাশিতে পড়তে হয় সব ধরনের যানবাহনকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব যানবাহনও আর চলাচল করেনি। বেলা ১২টার পর থেকে রাজধানীর সড়ক ছিল পুরোপুরি ফাঁকা। রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংষর্ঘ ঘটতে পারে এমন আশঙ্কায় এদিন খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে মানুষ বের হননি। আর যারা বের হয়েছিলেন তাদের যানবাহন স্বল্পতায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে থমকে যাওয়া নগরীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছিল রোগী ও পরীক্ষার্থীরা। যানবাহনের অভাবে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এদিন আগেভাগেই ঘর থেকে বের হয়। সামর্থ্যবান পরীক্ষার্থীরা প্রাইভেট কারে হলে পৌঁছালেও অনেক শিক্ষার্থীকে পায়ে হেঁটে, রিকশা, আবার হেঁটে পরীক্ষার হলে যেতে হয়।

মিরপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ ও গুলিস্তানসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সরকারি পরিবহনের মধ্যে বিআরটিসি আর হাতে গোনা দু-একটি বেসরকারি কোম্পানির বাস ছাড়া সড়কে আর কোনো বাস ছিল না। অল্প কিছু সিএনজি অটোরিকশা থাকলেও চালকরা সুযোগ বুঝে যাত্রীদের থেকে মাত্রাধিক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছিল বলে অভিযোগ এসেছে। এর ফলে বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রী রিকশা বা ভ্যানে করে গন্তব্যে পৌঁছান। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে এদিন পরিবহনের অপেক্ষায় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এদের কেউ কেউ উপায় না পেয়ে শেষমেশ পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। তবে সড়কে রিকশার উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। সড়কে চলা যানবাহনের অধিকাংশই ছিল ব্যক্তিগত গাড়ি বা অফিসের প্রাইভেট কার।দুপুরে ফার্মগেট এলাকা থেকে ১০-১২ জন যাত্রীকে একটি পিকআপে করে উত্তরায় যেতে দেখা যায়। তাদের একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন জানান, বাসের জন্য অনেক অপেক্ষা করেও লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ভাড়া ভাগাভাগি করে কয়েকজন মিলে এই পিকআপে রওনা দিয়েছেন। আবার যানবাহনের অভাবে রোগীদের দুর্ভোগ ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকা ও তার বাইরে থেকে আসা রোগীদের হাসপাতালে যেতে এবং হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে হুইল চেয়ারে বসে ভাঙা পা নিয়ে শরিফুন্নেছা তার স্বজনদের সঙ্গে ভ্যানে করে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। শরিফুন্নেছা জানান, ‘অন্য সময় উবার বা ট্যাক্সি ক্যাবে করে গেলেও আজ তা পাচ্ছেন না।’ অন্যদিকে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসা রোগীরাও এদিন সমস্যায় পড়েন। সংঘর্ষের আশঙ্কায় গতকাল নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দা গেছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর চোখেমুখেও ছিল হতাশার ছাপ।

নগরীর বিভিন্ন শপিং মল, রেস্টুরেন্ট ও দোকান খোলা থাকলেও সেখানে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা বিক্রেতারা এদিন অলস সময় পার করেন। গুলিস্তানের জুতা বিক্রেতা মো. রানা বলেন, ‘সারা দিনে আজ কোনো বেচাকেনা হয় নাই। মারামারির ভয়ে মার্কেটে কোনো ক্রেতাই আহে নাই। কিন্তু দোকান বসানোর জন্য প্রতিদিনই আমাদের চাঁদা দিতে হয়।’ একই অবস্থা নগরীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও ধানমন্ডির শপিং মলগুলোতেও। খাবার দোকানগুলোতেও অন্য দিনের তুলনায় বিক্রি ছিল অত্যন্ত কম। আর পুরান ঢাকার অধিকাংশ খাবার দোকান গতকাল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ী ভাঙচুরের শঙ্কায় এদিন দোকানই খোলেননি। রাজধানীর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয় আগেভাগেই। কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাটেও তল্লাশি করতে দেখা  গেছে পুলিশকে। ট্রেন ও লঞ্চ থেকে নেমে আসা যাত্রীদের পরিচয় ও গন্তব্য জানতে চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ট্রেনে  কোনো যাত্রীকে দাঁড়িয়ে আসতে দেওয়া হয়নি।

সর্বশেষ খবর