শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাইনবোর্ডসর্বস্ব রাজনৈতিক দল

চলছে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই, মার্চের মধ্যে নিবন্ধন দিতে চায় ইসি

গোলাম রাব্বানী

সাইনবোর্ডসর্বস্ব রাজনৈতিক দল

আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধনের জন্য যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে সাইনবোর্ডসর্বস্ব রাজনৈতিক দলই বেশি। এদের অনেকেরই কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেই।  কোনো কোনো দল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বাসা, আবাসিক ভবন, মুদিদোকানেও তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দেখিয়েছে। একই ভবনে দেখানো হয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অফিস। আবার নতুন করে কেন্দ্রীয় অফিসের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে জেলা-উপজেলায় নতুন নতুন সাইনবোর্ড লাগাচ্ছে দলগুলো। নির্বাচন কমিশন এসব দলের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও ইসি খবর নিচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করার চিন্তা করছেন তারা।

এদিকে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনের কাছে ৭৬টি নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলই অপরিচিত, নামসর্বস্ব। সেই সঙ্গে রয়েছে বাহারি নামের কয়েকটি দলও। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ৭৬টি দলের অনেকেই সাইনবোর্ডসর্বস্ব। যাদের অফিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এবারে হাতে গোনা কয়েকটি দল নিবন্ধন পেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানিয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে যেসব দল আবেদন করেছে ইসির কর্মকর্তারা তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করছেন। এমনকি অফিসের খোঁজখবর নিতেও শুরু করেছেন। নতুন দলের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী মাঠের অফিসের খবর নিচ্ছেন ইসির জেলা-উপজেলা কর্মকর্তারা। তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করবে কমিশন। ইসি বলছে, নিবন্ধনের শর্ত কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে নতুন নিবন্ধন দেওয়া হবে। এর আগে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে গত ৩০ অক্টোবর আবেদন আহ্বান করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩১ ডিসেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল।

নানা বাহারি নামের দলও তালিকায় রয়েছে— নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নিউ সংসদ লীগ, ঘুষ নির্মূল পার্টি, মঙ্গল পার্টি, কর্মসংস্থান আন্দোলন, সোনার বাংলা উন্নয়ন লীগ, সত্যব্রত আন্দোলন, সততা দল, জাতীয় পরিবার কল্যাণ পার্টি, শান্তির দল, জনতার কথা বলে, মৌলিক বাংলা, জনস্বার্থে  বাংলাদেশ, আলোকিত পার্টি।  ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘নাকফুল বাংলাদেশ’ নামের দলের আবেদনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের বিএনএস সেন্টারের দশম তলা। কিন্তু সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নেই। রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমও সেখানে পরিচালিত হয় না। যে কক্ষটিকে দলীয় কার্যালয় দেখানো হয়েছে, সেটি একটি গার্মেন্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কর্মকর্তারা বলেন, রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ ভবন যেন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্মস্থান। ২২/১ তোপখানা রোডে অবস্থিত ওই ভবনে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে এমন চারটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টির অফিসও। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ) এর অফিসও একই ভবনে। সূত্র জানায়, এর আগে দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হলো— বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি।

সর্বশেষ খবর