শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ-জাপায় একক প্রার্থী, দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

আওয়ামী লীগ-জাপায় একক প্রার্থী, দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি

১৯৯১ সাল থেকে গত পাঁচ সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত মজিবুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি তিনি। ফলে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুজ্জামান আহমেদ। বর্তমানে তিনি সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী।

আসনটি এক সময় জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত থাকলেও দল ও দলীয় প্রধানের জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং মজিবুর রহমান মারা যাওয়ায় নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে শুরু করেছে। প্রথমবারের মতো এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর নুরুজ্জামান আহমেদ এ আসনের দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সাধ্য মতো চেষ্টা চালাচ্ছেন উন্নয়নেরও। তাই এ আসনটিকে ঘিরে নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে জাপাও আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।

আর নেতৃত্ব সংকট ও দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে রয়েছে নানা সংকট। দলের একটি বৃহৎ অংশ চাচ্ছে এ আসন থেকে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু নির্বাচন করুক। অপর একটি অংশ চাইছে, শেষ বারের মতো সালেহউদ্দিন আহমেদ হেলালকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। কারণ হেলাল দীর্ঘ ১৮ বছর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং এই আসন থেকে টানা তিনবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ভোট করেছিলেন। এ আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত। এ আসনের কালীগঞ্জে নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়ি। তিনি কয়েকবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পরে দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জাপা প্রার্থীর কাছে সামান্য ব্যবধানে হেরে যান তিনি। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর প্রথমে খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ও পরে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো সংসদে গেলেও আগামী নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে ভালোভাবেই নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন নুরুজ্জামান আহমেদ। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অনেকটা উন্নয়নবঞ্চিত কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায় তিনি বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ দরিদ্রদের জন্য নানা কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে দল গোছানোরও কাজে মনোযোগী হয়েছেন। দলীয় লোকজনের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমানে একদিকে যেমন তার সমকক্ষ কেউ নেই, তেমনি আওয়ামী লীগ-জাপা জোট হলেও তিনিই হবেন জোট প্রার্থী। তবে নেতৃত্ব সংকট ও দলীয় কোন্দলের কারণে এই আসনে বিএনপির প্রার্থিতা নিয়ে রয়েছে ধূম্রজাল। দলীয় কোন্দল থাকলেও এই দুই উপজেলার সব শ্রেণির নেতা-কর্মীই দুলুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।  নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপি থেকে নির্বাচন করে তিনবার পরাজিত হওয়া সালেহউদ্দিন আহমেদ হেলালের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুজ্জামানের বিপরীতে দুলুকে মনোনয়ন দিলে আসনটি বিএনপির কব্জায় যেতে পারে। তবে এ আসনে ত্যাগী নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালেহউদ্দিন আহমেদ হেলাল যেমন মনোনয়ন প্রত্যাশী, তেমনি মনোনয়ন চাচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও। তাই শেষ পর্যন্ত কে হবেন এ আসনটির বিএনপির প্রার্থী তা নিয়ে আছে নানা সমীকরণ। ২০১৬ সালে জাপা নেতা মজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি হয়ে জাপাতে আসা রোকন উদ্দিন বাবুল চেষ্টা চালাচ্ছেন এ আসনে ‘লাঙ্গল’ টিকিয়ে রাখতে। তিনি নিয়মিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সভা-সমাবেশ করছেন।

সর্বশেষ খবর