শিরোনাম
রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুরান ঢাকায় পাঠদান বন্ধ করে স্কুল ভাড়া

শিক্ষার হালচাল - ৮

মাহবুব মমতাজী

পুরান ঢাকায় পাঠদানকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে বিয়েবাড়ির সাজসজ্জা ও রান্নাবান্না। দেওয়া হয় কমিউনিটি সেন্টারের মতো ভাড়া। কোনো হাঁকডাক না মেনেই এসবে সায় দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বংশালের এফ কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিতই এ অবস্থা চলছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা এ ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে পারছে না। এতে ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া একই চিত্র দেখা গেছে নাজিরাবাজার বালিকা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নবাবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মালিটোলার শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ও শাঁখারীবাজারের পগোজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজেও। স্থানীয়রা জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়াও স্কুলের ভিতরে সাজানো হয় বিয়ের মঞ্চ। স্কুলজুড়ে থাকে বড় বড় হাঁড়ি-ডেকচি। প্রাঙ্গণেই বড় বড় দুটো করে চুলা জ্বলে। তার পাশে পিয়াজ, রসুন, কাঁচা তরকারি কাটাকাটি করা হয়। আর বাইরে লোকজনের বিরাট আনাগোনা, হৈচৈ আছেই। স্কুলে পাঠদান চলাকালে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিবাদের সাহস পান না শিক্ষকরা। শুধু এই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেই নয়, পুরান ঢাকার আরও অনেক বিদ্যালয়ে রয়েছে একই সমস্যা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুটি স্কুলের শিক্ষক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য স্কুল প্রাঙ্গণ ভাড়া দেন। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকার কয়েকটি স্কুল যেন পরিণত হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারে।

এফ কে এম প্রাথমিক বিদ্যালয় : পুরান ঢাকার শিক্ষা প্রসারে ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ‘কমিউনিটি সেন্টার’ করা হয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে কোনো না কোনো অনুষ্ঠান চলে।

নাজিরাবাজার বালিকা বিদ্যালয় : পুরান ঢাকার একটি প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এটি। মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথেই সাজানো হয় বিয়ের মঞ্চ। স্কুলের দেয়ালে কাপড় টানিয়ে চলে বিয়ের সাজসজ্জা। অতিথিদের বসার জন্য চেয়ার, বড় বড় হাঁড়ি, ডেকচি প্রায়ই ছড়ানো-ছিটানো থাকে। এই স্কুলেরও কর্তৃপক্ষ বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য স্কুল প্রাঙ্গণ ভাড়া দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবাব কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাহুতটুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সামসাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই ঘটনা ঘটছে। সুরিটোলার জালাল উদ্দিন নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, আশপাশের কয়েকটি স্কুল রয়েছে যেখানে পড়াশোনার চেয়ে অনুষ্ঠানই চলে বেশি। আর স্কুলের শিক্ষকরা কাউকে নিষেধ করার সাহস পান না। কারণ যারা আয়োজন করে তারা স্থানীয় বাড়িওয়ালা ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের অনুসারী। পগোজ স্কুলের এক শিক্ষক জানান, বন্ধের দিন তাদের স্কুলটি ভাড়া দেওয়া হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাবদ সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করা হয় ৩ হাজার টাকা। স্কুল কর্তৃপক্ষই এ ভাড়া দিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, স্কুলটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এসব তথ্য আমরা কখনো কখনো জানি আবার কখনো জানি না। অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়ার কাজটি করে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটি। হয়তো তারা ভাড়া দেওয়ার টাকাটা স্কুল ফান্ডেই জমা করেন।

সর্বশেষ খবর