রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কেন লিখলাম

আসিফ নজরুল

কেন লিখলাম

আমার জীবনে প্রথম যে লেখাটি ছাপা হয় তা ছিল ছোটগল্প। আমি নিজে গল্প-উপন্যাস লিখেই সবচেয়ে আনন্দ পাই। নব্বই দশকের শুরুতে আমার উপন্যাসগুলো প্রবল জনপ্রিয়তা পেলে এই আনন্দ চরমে ওঠে। অথচ এই আমিই বিভিন্ন কারণে উপন্যাস লেখা বন্ধ রাখি বহু বছর।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর মাত্র গতবছর নতুন করে লেখা শুরু করি। আমার উপন্যাস ‘অসমাপ্তির পর’ পাঠকরা গ্রহণ করে আগ্রহের সঙ্গে। আমার শ্রদ্ধেয় স্যার সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেমন লাগল উপন্যাসটি। তিনি অনেক প্রশংসা করলেন। বললেন, মাঝখানে এতগুলো বছর না লিখে আমি অন্যায় করেছি। অন্যায়টা পাঠকের সঙ্গে, নিজের সঙ্গেও।

এই অন্যায়টা আর করব না আশা করি। এ বছর আমার নতুন উপন্যাস ‘বেকার দিনের প্রেম’ বের হয়েছে প্রথমা থেকে। এই উপন্যাস এক বেকার যুবকের আনন্দ-বেদনা নিয়ে। বেকারদের নাকি বেশি আত্মসম্মানবোধ থাকতে হয় না। আমি তা মানি না। বেকার হোক না হোক প্রত্যেক মানুষের আত্মসম্মানবোধ তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমার উপন্যাসের নায়ক রাজীব এই আত্মমর্যাদাবোধ নিয়েই জীবনে বিজয়ী হতে চেয়েছে। এই উপন্যাসের একটি অংশ নিচে দেওয়া হলো। “আমার চোর বংশের বড়লোক বন্ধু আছে একজন। নাম সাদমান। পুরো চারটা বছর সে আমার কাছে পড়া বুঝেছে। আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছিল তার বাবার রিয়েল স্টেট ফার্মে। আমি খুশি মনে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম শর্মির সঙ্গে। কিন্তু সে শর্মির দিকে খুব খারাপভাবে তাকিয়েছিল। তার সামনেই উচ্ছল চিৎকার করে উঠেছিল : ওয়াও! ইউ গট এ জুসি গার্লফ্রেন্ড! সে হয়তো আশা করেছিল খুশি হব। কিন্তু আমার ভালো লাগেনি কথাটা। মানুষ কি আম-কাঁঠাল নাকি যে জুসি হবে!

আমি তাকে বলি : জুসি কিরে গর্দভ! সাদমানকে কোনোদিন এভাবে ডাকিনি আগে। সে গর্দভ শুনে একটু ভ্যাবাচেকা খায়। বলে, কে গর্দভ?

তুই।

আমি গর্দভ?

হ্যাঁ। মাথায় গুওলা গর্দভ!

সাদমান সেই রাতেই ফোন করে আমাকে যা তা কথা বলেছে। এরপর থেকে আমার সঙ্গে কথা বলে না সে। আমিও বলি না। তার কাছে চাকরি চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

টকশোর আলোচক বা প্রথম আলোর কলামিস্ট হিসেবে আমি এখন বেশি পরিচিত। এসব পরিচয়েই আমার প্রায় চার লাখ ফলোয়ারের একটা ফ্যান পেজ আছে ফেসবুকে। নতুন উপন্যাস লিখেছি শুনে তারা খুশি হয়েছেন। তবে কেউ কেউ আবার চিন্তিতও হয়ে পড়েছেন। তাদের আশঙ্কা গল্প-উপন্যাসে মশগুল হয়ে না জানি আমি টকশো, কলাম লেখা এসব বাদ দিয়ে দেই! আমি না অবিচারের প্রতিবাদ করা থেকে থেমে যাই!

আমি তাদের কথা দিচ্ছি এটা আগে হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তাছাড়া, আমি মনে করি গল্প-উপন্যাসের মধ্য দিয়েও সমাজের বহু অসঙ্গতি তুলে ধরা যায়। আমার উপন্যাসেও তাই হয়েছে। সাংবাদিক বা কলামিস্টরা উপন্যাস লিখলে এটাই হওয়ার কথা। যেমন— বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক আমার ভ্রাতৃসম নঈম নিজাম এবার উপন্যাস লিখেছেন (নাম : রংমহল)। তার উপন্যাসটিও এক-এগারোর পরিপ্রেক্ষিতে। আমি তো মনে করি, আমাদের উপন্যাসগুলো সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

‘বেকার দিনের প্রেম’ পড়ার আমন্ত্রণ রইল সবার কাছে।

লেখক : অধ্যাপক আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর