রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎ শেষে আইনজীবী

নির্জন কারাগারে ফাঁসির আসামির মতো খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে কোনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তাকে সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখা হয়েছে। ফাঁসির আসামিকে যেভাবে রাখা হয়, সেভাবে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে। অথচ বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, একজন সাবেক সংসদ সদস্য, সংসদে দুবারের বিরোধীদলীয় নেতা এবং একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান। কিন্তু তাকে এখনো পর্যন্ত কোনো ডিভিশন দেওয়া হয়নি। গতকাল রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জেলগেটে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ব্যারিস্টার মওদুদ এ অভিযোগ করেন। তার আগে মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে স্রেফ একজন সাধারণ কয়েদি হিসেবে। ফাঁসির আসামিদের যেভাবে রাখা হয়- সেভাবে রাখা হয়েছে তাকে। তার রুমে এসি স্থাপন দূরের কথা- কোনো পরিচারিকাও দেওয়া হয়নি। অথচ বাইরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, কাজের মেয়ে ফাতেমাকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয়েছে। একটি পুরনো টেলিভিশন দেওয়া হলেও এতে বিটিভি ছাড়া আর কোনো চ্যানেল দেখানো হয় না। কোনো পত্র-পত্রিকাও দেওয়া হচ্ছে না। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে কোনো ‘ডিভিশন’ দেওয়া হয়নি। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শারীরিক দুর্বলতা প্রচুর। প্রয়োজনীয় চিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা নেই। খাবার-দাবারও দেওয়া হচ্ছে অপ্রতুল। আর বাইরে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, তাকে সবকিছুই দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

মওদুদ আহমদ আরও বলেন, পরিচারিকা ফাতেমাকেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে অখাদ্য খেতে দেওয়া হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে, রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেলে আগামীকাল সোমবার বা মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানান তিনি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে পাঁচজন আইনজীবী কারাগারে প্রবেশ করেন।

আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আইনজীবীরা : দুর্নীতি মামলায় কারান্তরিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল ও জামিন আবেদনের আইনি বিষয় ঠিক করতে কাজ করছেন তার আইনজীবীরা। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) পাওয়ার পর আপিল দায়ের করতে যেন বিলম্ব না হয় সেজন্য খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ঠিক করে নিচ্ছেন তারা। আপিলের সম্ভাব্য গ্রাউন্ড (ভিত্তি) ঠিক করতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এরই মধ্যে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। এদিকে রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার জন্য আজও সংশ্লিষ্ট আদালতে যোগাযোগ করা হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন বিএনপির পাঁচ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তারা হলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান। গতকাল এই পাঁচ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করে আপিল ও জামিন-সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনাও করেছেন। এ ছাড়া হাই কোর্টে আপিল শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সহযোগিতা করবেন বিচারিক আদালতে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার আগে আপিলের কোনো প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা বসে নেই। রায়ের কপি পাওয়ার পর আপিল করতে যেন কোনো বিলম্ব না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘হাই কোর্টে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) পক্ষে আমাদের পাঁচ সিনিয়র আইনজীবী মামলা লড়বেন। আমরা তাদের সহায়তা করব।’ সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমরা রায়ের সত্যায়িত অনুলিপির জন্য আবেদন করেছি। রবিবারও (আজ) আমরা সার্টিফায়েড কপির জন্য যোগাযোগ করব। কপি পাওয়ার পর সেটি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে রায়ে কী কী অসংগতি রয়েছে। ওই অসংগতিগুলো তুলে ধরেই আপিল আবেদন করা হবে।’ এর আগে বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে দেওয়া হয়েছে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান কারাদণ্ডের পাশাপাশি খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য আসামিদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানাও করেন। রায়ের পরপরই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার ভবনে। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন কাজী সালিমুল হক কামাল, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, মমিনুর রহমান ও সরফুদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক রয়েছেন। রায়ের পর পলাতক এই তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। প্রসঙ্গত, ১০ বছর আগে সৌদি আরব থেকে এতিমদের জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে দাখিল করেন। এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার শুরু করা হয়।

গত বছর ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শেষ হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত হলে ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।

সর্বশেষ খবর