রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বীকারোক্তি আদায়ে ক্রসফায়ারের হুমকি পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমরা যা বলছি, তুই সেভাবেই আদালতে স্বীকারোক্তি দিবি। নইলে তোকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে।’ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে যুবলীগ নেতা বায়েজিদ সাউথকে গ্রেফতারের পর পুলিশ এভাবেই হুমকি দেয় তাকে। তাদের শিখিয়ে দেওয়া কথা আদালতে বলতে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এসব অভিযোগ করেছেন বায়েজিদের স্ত্রী রুমা বেগম। গতকাল পুলিশি নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুমা। তিনি বলেন,

‘আমার স্বামীর জীবন নিয়ে আমি শঙ্কিত। আমি আমার স্বামীর জান ভিক্ষা চাই। পুলিশ যা করছে, তার সবই করছে স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশে। পুলিশ এখন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কিছুই ধার ধারছে না। পুলিশের গুলিতে রূপগঞ্জে সুমন নিহত হওয়ার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন এমপি নিজেই। রাজনীতিতে এমপির সঙ্গে না থাকায় এই খুনের মামলায় আমার স্বামীকে আসামি করা হয়েছে।’ বায়েজিদকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন রুমা। তিনি বলেন, ‘সুমন নিহত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রফিক ও আওয়ালকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি এমপির লোকজনও ছিল।’

জানা গেছে, রূপগঞ্জ থানার তারাবো ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ। ৮ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন মিয়া নিহত হন। এ ঘটনায় নিহতের শাশুড়ি কাজল রেখা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলার ১২ নম্বর আসামি বায়েজিদ।

রুমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোডে এমপি সমর্থিত আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মাঝে উত্তেজনা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়ে। সংঘর্ষের সময় অন্তত ৪০ জনকে আটক করা হয়। পরে পুলিশের ছররা গুলিতে আহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন মারা যান। আটক ৩৮ জনকে নাশকতা ও বায়েজিদকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

রুমা বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যান বায়েজিদ। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়। স্বামীর সঙ্গে জেলহাজতে দেখা হয়। তার কাছ থেকে জানতে পারি, সংঘর্ষের সময় বায়েজিদকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি অফিসে নিয়ে চালানো হয় ব্যাপক নির্যাতন। পরে সুমন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সেখানেই এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর লোকজন বায়েজিদকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রফিক-আওয়ালের নির্দেশে তারা গুলি ছুড়েছে— এ কথাটি পুলিশকে বলতে হবে। পুলিশ এ সময় বায়েজিদকে এমপির কথামতো স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দেয়। অন্যথায় তাকে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর অবস্থা এখন খুবই খারাপ। মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর ইশারায় এ মামলা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, যেন আমার স্বামীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।’ বায়েজিদ সাউথের বড় মেয়ে জেবা এসএসসি পরীক্ষার্থী ও মেজ মেয়ে সামিয়া পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে রিদমী সাউথের বয়স তিন বছর। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বরপায়।

সর্বশেষ খবর