সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলো-আঁধারে এই যাত্রা

আনিসুল হক

আলো-আঁধারে এই যাত্রা

প্রায় ১০ বছর ধরে আমি একটা নিমগ্নতার মধ্যে আছি। বঙ্গবন্ধু, শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন, ১৯৪৭, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, ৬ দফা, অসহযোগ, মুক্তিযুদ্ধ, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উপমহাদেশ— যেখানে যা পাই, জোগাড় করি, পড়ি।

আত্মজীবনী, দেশি-বিদেশি প্রামাণ্যগ্রন্থ পড়ি। প্রথমে লিখি ‘ভুল ভোর’, ঈদসংখ্যায় বের হয়। পরে উপন্যাস বেরোল ‘যারা ভোর এনেছিল’ ২০১২ সালে, তারপর ‘উষার দুয়ারে’ ২০১৩ সালে। এবার বেরোল ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’, প্রথমা থেকে। এই নিমগ্নতা থেকে আমার স্থিরসিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আমরা পেয়েছিলাম বলে। বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা তাই সমার্থক।

এই মানুষটা বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে কী কষ্ট সহ্য করেছেন, তার পরিবার কত দুর্ভোগ স্বীকার করেছেন। ছোট শেখ কামাল তার আপাকে বলেছে, ‘হাছু আপা, তোমার আব্বাকে আব্বা বলে ডাকি।’ শেখ রাসেল কারাগারকে বলত আব্বার বাড়ি। বঙ্গবন্ধু বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু আপস করেননি। ১৯৪৮ সালেও বড় ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। আঁধারের যাত্রীরা— শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীরা— পরবর্তীকালে তাজউদ্দীনরা আলো হাতে এগিয়ে গেছেন। ছাত্ররা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। আন্তর্জাতিক কত খেলা হয়েছিল। আমি ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’ উপন্যাস লিখেছি ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল সময়পর্ব নিয়ে। তখন ফুলবাড়িয়ায় রেলস্টেশন, তেজগাঁও বিমানবন্দর, ধানমন্ডিতে ধানখেত। মুখ্যমন্ত্রী চলেন সি-প্লেনে। তাজউদ্দীন আহমদের বিয়ে হলো বেলিফুল দিয়ে। বঙ্গবন্ধু গাড়ি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে তাজউদ্দীনকে ডেকে আনলেন তার সঙ্গে থেকে কাজ করতে। আবার মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরীর মধ্যস্থতায় শেখ মুজিবের সঙ্গে মনি সিংহ, খোকা রায়ের বৈঠকও হয়েছিল। শেখ মুজিব তখনই উদগ্রীব ছিলেন, সেই ষাটের শুরুতে স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করতে। তারপর তো ঐতিহাসিক ছয় দফা। এসবই আমার উপন্যাসের বিষয়। সংলাপ রচনা করেছি স্বাধীনতা নিয়ে। চেষ্টা করেছি ওই সময়ের মানুষ আর পরিবেশ তুলে ধরতে। কেমন হয়েছে পাঠকেরা বলবেন। আগের দুটি বই কেউ কেউ পছন্দ করেছিলেন। এবার খুব নার্ভাস লাগছে, মনে হচ্ছে, এটা আমার প্রথম বই। জর্জ অরওয়েল বলেছিলেন, ‘আমি ব্যর্থ হবই, প্রতিটা বই হলো একটা ব্যর্থতা, কিন্তু আমি কিছুটা জানি, আমি কী নিয়ে লিখছি।’ আমি অরওয়েলের এ কথা স্মরণ করি।

বঙ্গবন্ধুকে কোটি সালাম জানিয়ে এই লেখা শেষ করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর