সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

৬ হাজার কোটি টাকায় হবে ঢাকা অপেরা হাউস

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রাজধানীর হাতিরঝিলে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা অপেরা হাউস’ নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল পরিমাণ অর্থ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামো থেকে নির্বাহ করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রকল্পটির অগ্রাধিকার বিবেচনা করে একাধিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের প্রস্তাব আসে। তবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় চাইছে একবারেই কাজটি সম্পন্ন করতে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, প্রকল্পটির বিষয়ে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। সে জন্য এক পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা যেতে পারে।প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঢাকা অপেরা হাউস নির্মাণ বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১২ ডিসেম্বর এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচ্য প্রকল্পটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-তে অননুমোদিত প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। পিপিআর, ২০০৮-এর বিধান অনুযায়ী নির্মাণ কাজের সহযোগিতায় থাকবে সেনাবাহিনী। প্রকল্পের জন্য মোট ২০ দশমিক ০৩২৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকল্পটির নকশা দেখানো হয়েছে। সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসপি)-এর প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মো, মাসুদ বলেন, গত ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঢাকা অপেরা হাউসের ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে প্রেজেন্টেশনটি দেখেন এবং প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদন দরকার। প্রাথমিক পর্যায়ের এই কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে প্রায় ৪৮ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর এ এস এম সাদিক শাহরিয়ার সভায় জানান, প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের যাতায়াত সহজতর করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার ট্রাফিক জ্যাম নিরসনের লক্ষ্যে হাতিরঝিলে একটি টানেল নির্মাণ করা হবে। টানেলের দুই পাশে আন্ডারওয়াটার একুরিয়াম নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তবে একুরিয়াম থেকে অনেক রাজস্ব আসবে। বিশ্বে বিশেষ সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপত্যের অন্যতম সিডনির অপেরা হাউস। যা অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে অবস্থিত। এটি দেখতে নৌকার পাল আকৃতির। সারা বছর নানা ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে অনুষ্ঠিত হয়। কোটি কোটি পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সিডনি অপেরা হাউস। সিডনির সেই অপেরা হাউসের অনুকরণে হাতিরঝিলে ঢাকা অপেরা হাউস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এটি হবে সম্পূর্ণ আলাদা ও বিশ্বের বৃহত্তম অপেরা হাউস। প্রস্তাবিত অপেরা হাউসে মূল মঞ্চ ও অ্যাম্পিথিয়েটার ছাড়াও থাকবে বহুতল বিশিষ্ট কার পার্কিং সুবিধা। তার পাশেই থাকবে সিনেপ্লেক্স। সিনেপ্লেক্সের এক পাশে থাকবে জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও শিশু কেন্দ্র। মূল মঞ্চের এক পাশে থাকবে কনসার্ট হল। এ ছাড়া থাকবে জাদুঘর, প্রদর্শনী কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও কনফারেন্স হল। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা অপেরা হাউসের মূল পরিকল্পনাসহ অন্যান্য উপাদান দেখেছেন এবং অনুমোদন দিয়েছেন। এখন চলছে ডিপিপির কাজ। আশা করছি তিন মাস পর একটি ফলাফল পাওয়া যাবে। আর এই পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগতে পারে পাঁচ বছর।’ তিনি বলেন, অনেক কারণেই ‘ঢাকা অপেরা হাউস’ হবে বৃহত্তম ও ব্যতিক্রম। দুনিয়ার অন্যান্য অপেরা হাউসে অডিটরিয়াম আছে দুটি বা তিনটি। আমাদের অপেরা হাউসে থাকবে ১০-১২টি অডিটরিয়াম, সিনেপ্লেক্স। এমনকি কনসার্ট করার মতো জায়গাও থাকবে এখানে। এসব বিচারে ‘ঢাকা অপেরা হাউস’ হবে পৃথিবীর বৃহত্তম।

সর্বশেষ খবর