মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

কী শিখছে প্রাথমিকের শিশুরা

শিক্ষার হালচাল - ১০

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গত ৪ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। এ সময় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কক্ষে গিয়ে মন্ত্রী তাদের ‘ফোর’ বানান লিখতে বলেন। কিন্তু কেউই ফোর বানান লিখতে এবং বলতে পারেনি।

মন্ত্রী তখন ক্ষোভের সঙ্গে ওই শ্রেণিশিক্ষকের কাছে কত বেতন পান তা জানতে চান। শিক্ষক তখন মন্ত্রীকে জানান, তিনি ২৬ হাজার টাকা বেতন পান। মন্ত্রী বলেন, ‘বেতন তো বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু আপনি শিশুদের কী শেখাচ্ছেন? তারা তো ফোরে পড়ে; অথচ ফোর বানান জানে না।’ মন্ত্রী তখন হতাশার সুরে বলেন, ‘আমরা মানসম্মত শিক্ষার কথা বললে কী হবে, মাঠপর্যায়ের চিত্র আসলে খুবই করুণ।

ঠিক একইভাবে প্রাথমিক শিক্ষার এই বেহাল দশার চিত্র উঠে এসেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষানীতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন-

২০১৭-তে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার মাত্র ৪০ ভাগ পূরণ হচ্ছে স্কুল থেকে আর বাকি ৬০ ভাগ নির্ভর করছে শিক্ষার্থীর ওপর। পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলায় ৭৭ ভাগ ও গণিতে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীর শিখন মান নিম্ন পর্যায়ের। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান যাচাই করতে প্রতি দুই বছর পরপর জরিপ পরিচালনা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় ৩৫ ভাগ ও গণিতে ৫৭ ভাগ শিক্ষার্থীর শিখন মান নিম্ন পর্যায়ের। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, আমরা স্কুলে গিয়ে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কেমন শিখছে তা যাচাই করি। যেমন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুরা প্রতি মিনিটে কতটুকু বাংলা এবং ইংরেজি শুদ্ধভাবে লিখতে ও পড়তে পারে। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মিনিটে কতগুলো ইংরেজি শব্দ শুদ্ধ করে পড়তে পারে। এই বিষয়গুলো যাচাই করে তৈরি করা হয় এ প্রতিবেদন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সিনাবহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, স্কুলে সহশিক্ষা কার্যক্রমের উপকরণ বাড়ানো হলে শিশুরা স্কুলে আসতে আরও বেশি আগ্রহী হবে। এতে আনন্দের সঙ্গে শিখবে শিশুরা। শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, যাদের শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ আছে তাদেরই কেবল এ পেশায় আশা উচিত। বিষয়ের জ্ঞান বড় কথা নয়। প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত কমাতে হবে, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ দিতে হবে, শিশুদের পড়ার জন্য আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের শিশুদের শিখন মান নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন করেছিল। সেখানে পঞ্চম শ্রেণির ২৫ ভাগ শিক্ষার্থীর বাংলায় এবং ৩৫ ভাগ শিক্ষার্থীর গণিতে শিখন মান কাঙ্ক্ষিত ছিল না। বর্তমানের এ প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রতি বছরই আরও নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।

সর্বশেষ খবর