শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সবজির দাম কমছে

পিয়াজের ঝাঁজ কমছে না কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়াজের ঝাঁজ কমছে না কেন

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির দাম কমেছে কিন্তু পিয়াজের দাম রয়েছে আগের মতোই। ভারত থেকে আমদানি হওয়া পিয়াজের ক্রয়মূল্য ১৭ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে।

গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, শান্তিনগর, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া এবং খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বাজারদরের নানা তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কারওয়ান বাজারে গতকাল সকালে ভোক্তা পর্যায়ে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে আগের সপ্তাহের মতো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরেই। পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, আমদানি করা পিয়াজের দাম কমে গেলে স্থিতিশীল অবস্থায় দাম চলে আসবে। যদিও এক হিসেবে দেখা গেছে, ভারত থেকে পিয়াজ আমদানির পর ক্রয়মূল্যসহ প্রতি কেজি পিয়াজের দাম হওয়ার কথা ১৭ টাকা। সেই পিয়াজই দেশি বাজারে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের মতোই প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৪৫ টাকা ও আমদানি করা পিয়াজ ৪২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সর্বশেষ খুচরা বাজারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৫০ ও আমদানি করা পিয়াজ ৫৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে পিয়াজের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা। এ প্রসঙ্গে পাইকারি বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, ‘আমদানি করা পিয়াজের দাম কমেছে ঠিকই কিন্তু আগের চালানের অনেক পিয়াজ রয়ে গেছে। তাই দাম সমন্বয় করে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে দ্রুত দুই প্রকার পিয়াজের দাম কমবে বলে আশা রাখছি।’ হাতিরপুল কাঁচাবাজারের পিয়াজের খুচরা বিক্রেতা শামীম বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক ধরনের কথা বলছেন।’ এদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে প্রতি লিটার সয়াবিনে দুই টাকা বেড়েছে বলে জানা গেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের ডিস্ট্রিবিউশন সেলের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বেশি দামে ডিও খুলতে হচ্ছে তাদের। পাঁচ লিটারের চারটি বোতলে আগে ডিও খুলতে খরচ হতো এক হাজার ৮৮০ টাকা। এখন পড়ছে এক হাজার ৯২০ টাকা। এক ও দুই লিটারের বোতলেও একই হারে দাম বাড়িয়েছে কয়েকটি কোম্পানি। তবে বর্ধিত দামের সয়াবিন তেল এখনো খুচরা বাজারে আসেনি। একটি কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন সেলের কর্মী জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে এক লিটারের প্রতি বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকায়। দুই লিটার ২১৬ টাকা এবং পাঁচ লিটারের প্রতি বোতল কোম্পানি ভেদে ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দামের ওপর প্রতি লিটারে এখন আরও দুই টাকা করে দাম বাড়বে। এ ছাড়া ঢাকার বাজারগুলোতে সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে লাউ ও টমেটোর দাম। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। দাম কমলেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে লাউ। ৫০ টাকার নিচে লাউ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার পিয়াজ ও কাঁচামরিচের পাশাপাশি বেগুন, শিম, গাজর, ফুলকপি, পাতাকপি, ওলকপি (শালগম), লালশাক, পালনশাক, লাউশাকসহ অন্যান্য সবজি গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম, ব্রয়লার মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের। বিক্রেতারা বলেছেন, বাজারে লাউ ও টমেটোর সরবরাহ বেড়েছে। যে কারণে আগের সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা কম। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম সব থেকে বেশি কমেছে লাউয়ের। খিলগাঁও তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে লাউ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আজ তা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আড়ত থেকে কম দামে আনতে পারার কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করছি।’ রামপুরা বাজারে পাকা টমেটো মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগেও বাজারটিতে পাকা টমেটোর কেজি ছিল ৩০ টাকা। এ বিষয়ে সবজি বিক্রেতা মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘এখন টমেটোর ভরা মৌসুম। আড়তেও পর্যাপ্ত টমেটো পাওয়া যাচ্ছে, কোনো সংকট নেই। তাই দাম কম।’ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি আগের সপ্তাহের মতো ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই দামে পাওয়া যাচ্ছে পাতাকপি। গত সপ্তাহের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শালগম। এ ছাড়া বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা,  পেঁপে ১০ টাকা কমে ২৫ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি টমেটো ১০ টাকা কমে ২০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, আলু ২০ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ২৫ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ৩০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পিয়াজ পাতা এক আঁটি ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক আঁটি লালশাক ১৫ টাকা ও ধনিয়াপাতা ৪০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা, খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা, দেশি মুরগি ২৪০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি প্রতি পিস আকারভেদে ১৫০ থেকে ২২০ টাকা ও পাকিস্তানি মুরগি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর