রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

পায়রা যাচ্ছে পিপিপিতে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পায়রা যাচ্ছে পিপিপিতে

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম এবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিং করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে বেলজিয়ামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ কোম্পানি করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ (পাবক)। ওই কোম্পানিটি নিজে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি বেলজিয়াম সরকারের কাছ থেকে ঋণ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বিদেশি ওই ঋণে ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পায়রা বন্দরে বড় জাহাজ ভেড়ার জন্য আমরা রাবনাবাদ চ্যানেলে ড্রেজিংয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এটি পিপিপির আওতায় বাস্তবায়ন হবে। বন্দরের জন্য ড্রেজিংই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ চ্যানেলটি ড্রেজিং করা না হলে পরিকল্পনা মোতাবেক অন্যান্য অবকাঠামো, যেমন কনটেইনার, বাল্ক, এলএনজি টার্মিনাল ইত্যাদি স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হলে এটি কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার প্লান্ট চালু করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। কারণ এ বিদ্যুেকন্দ্রের কয়লা আমদানিতে বন্দর ব্যবহার হবে।’ জানা গেছে, পায়রা বন্দরের ৩৬ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল দৈর্ঘ্যের মূল চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে গভীরতার তারতম্য রয়েছে। মূল চ্যানেলে ড্রেজিং করে বন্দরটিকে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরে রূপান্তর করতে ১৪ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা প্রয়োজন। প্রথম পর্যায়ের ড্রেজিং শেষে ১১ মিটার গভীরতার জাহাজ মূল বন্দরে প্রবেশে সক্ষম হবে। ভবিষ্যৎ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২ মিটার এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ মূল বন্দরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, পায়রা বন্দরের ড্রেজিংয়ের জন্য গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যৌথ কোম্পানি। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ (পাবক) এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডি নুল’ (জেডিএন) এই যৌথ কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রতি চুক্তি সই করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৫৩২ ইউরো খরচ হবে, স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৮০ শতাংশ ঋণ এবং ২০ শতাংশ যৌথ কোম্পানির মূলধন থেকে দেওয়া হবে। এ ঋণ বেলজিয়ামের কাছ থেকে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে বন্দরটি যেহেতু এখনো গ্রিনফিল্ড প্রজেক্ট, তাই সম্পূর্ণ ঋণের (৮০ শতাংশ) বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দিতে হবে বলে বেলজিয়াম সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে, যে ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টির নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয়েছে তা কোন সংস্থা গ্রহণ করবে (পায়রা বন্দর, নাকি যৌথ মূলধনি কোম্পানি)? এ ছাড়া ড্রেজিং কার্যক্রম পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে না করে যৌথ কোম্পানি গঠনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পায়রা বন্দর সচল রাখতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি চ্যানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংও গুরুত্বপূর্ণ। একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে এই ড্রেজিং কাজ করতে হবে। ফলে বিদেশি একটি অভিজ্ঞ ড্রেজিং কোম্পানিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য অংশীদার হিসেবে নিয়ে একটি যৌথ কোম্পানির মাধ্যমে ড্রেজিং কাজ করা হলে নিয়মিতভাবে জাহাজ চলতে পারবে। এ ছাড়া এ ধরনের ড্রেজিংয়ের কাজ একটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে পিপিপির আওতায় করা হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থার সৃষ্টি হবে। অর্থ বিভাগেরও আর প্রশ্ন থাকবে না।

আবদুস সামাদ বলেন, একটি বন্দর চালু করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব অবকাঠামো দরকার সেগুলো সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের বয়া স্থাপন, লাইটহাউস নির্মাণ, ভিএইচএফ কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন এবং প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দরের কার্যক্রম প্রাথমিক পরিসরে শুরুর লক্ষ্যে অধিগ্রহণকৃত ১৬ একর জায়গায় বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়ন, যেমন মাটি ভরাট, সংযোগ সেতুসহ তিনটি পন্টুন স্থাপন, পাঁচ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ক্রেন স্থাপন, ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রস্থের ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণ, পুকুর খনন, সোলার লাইট, জেনারেটর, সেন্টি পোস্ট ব্যারাক এবং নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরে সার্ভিস জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে ৫ কিমি সংযোগ সড়ক হয়েছে। প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

উপরন্তু পায়রা বন্দর এলাকায় একাধিক তাপ ও এলএনজি বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের তাপবিদ্যুেকন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০১৯ সালে উৎপাদন শুরু হবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাপবিদ্যুেকন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহের জন্য চ্যানেলে অন্তত ১৪ মিটার পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। এ কারণে ড্রেজিং প্রকল্পটি জরুরি ভিত্তিতে শুরু করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে জানান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর