মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সমমনা দলগুলো নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা

—— মুফতি ফয়জুল্লাহ

সমমনা দলগুলো নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। জোট হলে হয়তো সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেবেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সরকারের সফলতা-ব্যর্থতাসহ নানা বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি জানান, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। দলের সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, এ দেশের উলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ জনতার শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোট। সংগঠনটি দিশারির ভূমিকা পালন করে আসছে। সারা দেশে জোর কর্মতৎপরতা রয়েছে। সংগঠন গোছাতে নেতারা বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। এতে দলের নেতা-কর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত। আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচনমুখী দল। প্রতিটি আসনেই আল্লাহভীরু, দেশপ্রেমিক যোগ্য প্রার্থী দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে আমাদের। ১৯৯১ ও ১৯৯৬-এ আমরা এককভাবে নির্বাচন করেছি। ২০০১ ও ২০০৮ সালে আমরা জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। একক প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা অংশ নিইনি। বর্তমানে আমরা কোনো জোটে নেই। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘মোটা দাগে সাফল্য-ব্যর্থতা তুলে আনা যাবে না। যেমন সফলতা আছে, ব্যর্থতাও আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্প, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এগুলোকে জনগণ অবশ্যই সফলতা হিসেবে দেখছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, বাজেটে বিভিন্ন জিনিসের ওপর কর আরোপ, ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ ইত্যাদি সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা। এ জন্য অর্থমন্ত্রীই দায়ী। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিও সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা।’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। খুন, চুরি-ডাকাতি, জবরদখল, নারী ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তবে সরকার সাধ্যমতো আইনশৃঙ্খলার উন্নতি সাধনে কাজ করছে। আমাদের উচিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। তাহলে অপরাধীদের দাম্ভিকতা কমবে।’ শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘লাগাতার প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটা ঠেকানো না গেলে দেশ মেধাহীন হয়ে পড়বে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, অরাজকতাও শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি সাধন করছে। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০ ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন, ২০১৬-এর বিতর্কিত কয়েকটি ধারা শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এগুলো সমাধানের লক্ষ্যে দেশের আলেম-উলামা ও ইসলামী দলগুলো অহিংস কর্মসূচি ও আন্দোলন চালিয়ে আসছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট অংশ নেবে কি না—জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় দেখছি আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরাও আমাদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব কি না এটা ইসলামী ঐক্যজোটের মজলিশে শূরা ঠিক করবে। আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি, আমরা দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে আমরা অবশ্যই নির্বাচন করব ইনশা আল্লাহ।’

সর্বশেষ খবর