মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
আনসার-ভিডিপি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সতর্ক থাকার নির্দেশ

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে জনগণের সাংবিধানিক ভোটাধিকার যেন যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে আপনাদের প্রতিটি সদস্যকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশের জাতীয় নির্বাচন আরও সমৃদ্ধ হোক, জনগণ যেন সঠিকভাবে তার সাংবিধানিক অধিকারটা প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়টায় আপনাদের যথাযথভাবে নজর দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা গতকাল সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার একাডেমিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৮তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। এ সময় তিনি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সব শ্রেণি-পেশার নাগরিক দিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি অভিভাবক ও শিক্ষকদের তাদের সন্তান ও শিক্ষার্থীরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কী করে তা ভালোভাবে খোঁজখবর রাখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ আনসার পদক, রাষ্ট্রপতি আনসার পদক, রাষ্ট্রপতি ভিডিপি পদক; বাংলাদেশ আনসার সার্ভিস মেডেল, রাষ্ট্রপতি আনসার সার্ভিস মেডেল, বাংলাদেশ ভিডিপি সার্ভিস মেডেল এবং ভিডিপি সার্ভিস মেডেল বিতরণ করেন। এ সময় ১২৬ জনকে পদকে ভূষিত করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসারের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন ও একাডেমির কমান্ড্যান্ট সাইফউদ্দিন মোহাম্মদ খালেদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনীতিক এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পরে আনসার ও ভিডিপির বিশেষ দরবারেও অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের শাসনকালে দেশ আজ সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা দেশের সব বাহিনীর উন্নয়নে যেমন পদক্ষেপ নিই তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও কাজ করি। ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত কাজ করে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’ তাঁর নির্বাচনী ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে ডিজিটালাইজড করায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি, আজকে সবার হাতেই মোবাইল ফোন, ১৩ কোটি সিম ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সার্ভিস পায়। ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলে গ্রামপর্যায়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

দেশ আজ পরমাণু যুগে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং আগামী মার্চ নাগাদ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অর্থাৎ জল, স্থল, আকাশ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ বিরাজমান।’

নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজেদের সম্পদ দিয়ে নিজেদের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজ করছি।’

দেশের বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় উন্নীত করে উন্নয়নকে গ্রামপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গ্রামপর্যায়ের একটি মানুষও আর গৃহহারা থাকবে না, একটি মানুষও ক্ষুধায় কাতর হবে না, প্রতিটি মানুষ চিকিৎসাসেবা পাবে, প্রতিটি ছেলে-মেয়ে স্কুলে যাবে, লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে। বর্তমান সরকার সবসময় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নে তৎপর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান থেকে শুরু করে আপনাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অনুযায়ী বিসিএস কর্মকর্তাদের পদের মানোন্নয়ন সবই আমাদের সরকার করেছে।’ তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট-কোম্পানি কমান্ডার, বিভিন্ন পদবির ব্যাটালিয়ন আনসার, কোয়ার্টার মাস্টার ও অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন ১ হাজার ৩০০ এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪০০ টাকা ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা এবং ১৫ আগস্ট নিহত তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চার নেতা, ভাষাসৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ ও সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আনসার বাহিনীর বীর সৈনিকদের ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আমবাগানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে আনুষ্ঠানিক ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁদের ৪০ হাজার থ্রি নট থ্রি রাইফেলই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি। পরে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপির পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

সর্বশেষ খবর