বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশে দেশে শহীদ মিনার বাংলা সাইনবোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

বায়ান্নর একুশের রক্তঝরা ঘটনার এক দিন পরই মহান শহীদদের স্মরণে গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার। একুশের সব স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মাণের পরদিনই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তা। কিন্তু এখন  দেশের এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে না, যেখানে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় না, যেখানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের যেখানেই গড়ে উঠেছে বাঙালি জনবসতি, সেখানেই পরম মমতায় গড়ে উঠছে শহীদ মিনার। বাংলাদেশের বাইরে প্রথম শহীদ মিনার গড়ে ওঠে ব্রিটেনের ওল্ডহ্যাম শহরে, ১৯৯৭ সালে। স্থানীয় বাঙালি কাউন্সিলরদের দাবির মুখে ওল্ডহ্যাম কাউন্সিলের জমি এবং নগদ অর্থ বরাদ্দের সুবাদে স্থানীয় বাঙালিদের কয়েকটি সংগঠনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ওই শহীদ মিনারটি গড়ে ওঠে। এটি নির্মিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে। এটি নির্মাণের ঠিক তিন বছর পর আরেকটি শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডের সর্ববৃহৎ বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা পূর্ব লন্ডনে। বাঙালিদের উদ্যোগেই তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কে। এরপর শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে লুটন শহরে। জাপানের রাজধানী টোকিওর প্রাণকেন্দ্র তোসিমা সিটিতে ন্যাশনাল থিয়েটার হলের পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলেই ২০০৬ সালে নির্মিত হয়েছে একটি মিনার। জাপান সরকারের বরাদ্দ দেওয়া জমিতে এই মিনারটি নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ওমানে গড়ে উঠেছে শহীদ মিনার।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নির্মিত এই মিনারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে  সেখানকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খন্দকারের উদ্যোগে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত অ্যাশফিল্ড হেরিটেজ পার্কে একুশে একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে ২০০৬ সালে নির্মিত হয়েছে একটি শহীদ মিনার। এটিকে অবশ্য বলা হচ্ছে মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ। দাবি করা হচ্ছে, এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ। ঢাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে না হলেও ভাষা শহীদদের স্মরণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নির্মিত হয়েছে আরও দুটি শহীদ মিনার।

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার ভাষা উদ্যানে (কার্জন পার্ক) ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয় ‘ভাষা শহীদ স্মারক’। কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে এ বছর দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে নির্মিত হয়েছে আরেকটি শহীদ মিনার। আসাম প্রদেশের শিলচরেও আছে ভাষা শহীদের স্মরণে শহীদ মিনার। সেটি অবশ্য নির্মিত হয়েছে সেখানকার বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শহীদ ১১ জনের স্মরণে। ইউরোপে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের পর ইতালির আদরিয়াটিকো সাগরের কোলঘেঁষা বন্দর শহর বারিতে নির্মিত হয় শহীদ মিনার। ইতালির দ্বিতীয় শহীদ মিনার স্থাপিত হয় রাজধানী রোমে। ভিয়া পানামার ইসহাক রবিন পার্কে এটি নির্মিত হয় ২০১১ সালের  ফেব্রুয়ারিতে। ফ্রান্সের বাঙালি কমিউনিটি প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে থাকে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা হলে ফ্রান্সের বাঙালি কমিউনিটির চেষ্টায় প্যারিসে স্থায়ী শহীদ নির্মাণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের শ্যাডো ক্রিয়েশন  সেন্টারের সামনে খেলার মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে ব্রোঞ্জের ১২ ফুট প্রস্থ এবং ১৮ ফুট উচ্চতার একটি প্লাক স্থাপন হয়েছে। কানাডার দুটি শহর টরেন্টো ও মন্ট্রিলে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। জার্মান সরকারও শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর