শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সৌরবিদ্যুতে পর্যটন পাহাড়ি জীবন

জিন্নাতুন নূর, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে

সৌরবিদ্যুতে পর্যটন পাহাড়ি জীবন

সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করেই দেশের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠী তাদের বৈদ্যুতিক সুযোগ-সুবিধাদির চাহিদা পূরণ করছেন। আবার পাহাড় ঘিরে দেশের সম্ভাবনাময় যে পর্যটনশিল্প সেখানে সৌরবিদ্যুৎ এক ধরনের নীরব বিপ্লব ঘটাচ্ছে। সরেজমিন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি এই দুই জেলা ঘুরে দেখা যায়, ছোট ছোট সোলার প্যানেল সেই এলাকার মানুষের ঘরে আলো পৌঁছে দিচ্ছে। সেখানে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস আর বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত টেলিভিশনও চলছে সৌরবিদ্যুতের শক্তিতে। এমনকি পাহাড়ি এলাকার স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হোটেল,  রেস্তোরাঁ ও রিসোর্টও সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। পার্বত্য এলাকার পর্যটন স্পট সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাড়ায় লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। এখানে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ছাড়াও আছে বেশ কিছু দোকান, খাওয়ার হোটেল ও পর্যটকদের থাকার রিসোর্ট। সমতল থেকে উঁচু পাহাড়ে অবস্থানের কারণে বিদ্যুতের জন্য এখানকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই সৌরশক্তি ব্যবহার করছেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের প্রতিটি ঘরের ছাদেই দেখা যায় সোলার প্যানেল। ব্যবহারকারীরা নিজ নিজ চাহিদামতো রাতের আঁধার দূর করতে কেউ ঘর আলোকিত করার কাজে আবার কেউ টেলিভিশন দেখতে সোলার প্যানেল স্থাপন করেছেন। কংলাক পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, দুর্গম এলাকায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য সৌরবিদ্যুৎ ছাড়া তাদের কাছে সাশ্রয়ী আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার, সাজেক বিগত কয়েক বছরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি ভ্রমণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। পর্যটনের ভালো সম্ভাবনা থাকায় এখানে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট। এর সবগুলোতেই সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। মেঘপুঞ্জি রিসোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম তাঁর সঙ্গে আলাপকালে জানান, হাতেগোনা দু-একটি রিসোর্টে রাতে তিন-চার ঘণ্টা জেনারেটর চালানো হয়, যা বেশ ব্যয়বহুল। বেশিরভাগ রিসোর্টই বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা বাজার থেকে সংক্ষিপ্ত পথে রাঙামাটির সাজেকে যাওয়ার পথে পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি, দোকানপাট, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ছাদেও চোখে পড়বে সোলার প্যানেল। স্থানীয়রা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সংস্থার উদ্যোগে দীঘিনালা পর্যন্ত বিদ্যুতায়ন হলেও এরপর দুর্গম পাহাড়ি পথে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। তাই, এসব অঞ্চলের মানুষ সৌর বিদ্যুেক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন। রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের বড়দাম বাজারে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বিনোদন স্পট ও রিসোর্ট। পর্যটকদের বৈদ্যুতিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এসব রিসোর্টেও ব্যবহার হচ্ছে সোলার প্যানেল। ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা এক পর্যটক সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায় সৌরবিদ্যুৎ এক ধরনের নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে যা পর্যটন বিকাশেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

সর্বশেষ খবর