রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

আরও ভয়াবহতায় অ্যাসিড সন্ত্রাস

শুধু নারী নয়, হামলা হচ্ছে শিশু পুরুষের ওপরও। বাড়ছে প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ

জিন্নাতুন নূর

আরও ভয়াবহতায় অ্যাসিড সন্ত্রাস

শুধু তরুণী ও বিভিন্ন বয়সী নারীর ওপরই নয়, দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ বা অ্যাসিড নিক্ষেপ হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী পুরুষ ও শিশুদের ওপরও। দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কে বনিবনা না হওয়া, প্রেমের প্রস্তাবে অস্বীকৃতি ও যৌতুকের জন্য বাংলাদেশে নারীরা অ্যাসিড হামলার শিকার হলেও এখন সম্পত্তি ও জমিজমা-সংক্রান্ত মামলা এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে পুরুষদের ওপরও ক্ষতিকর এই রাসায়নিকটি নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিহিংসাবশত অ্যাসিড হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ সূত্রে জানা যায়। আর উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, অ্যাসিড নিক্ষেপের সময় ভুক্তভোগী নারী-পুরুষদের সঙ্গে থাকা ছেলেশিশুরাও অ্যাসিড হামলার শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া ইভ টিজিংয়ের শিকার মেয়েশিশুদের লক্ষ্য করে বখাটেদের অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা প্রায়ই ঘটাতে দেখা যাচ্ছে।

অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন নামক সংগঠনটি দেশে অ্যাসিডে আক্রান্তদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। সংগঠনটির ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তালিকায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে দেশে মোট অ্যাসিড-সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে ৭০টি আর অ্যাসিডে ঝলসে যান ৮৬ জন। ২০১৪ সালে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে ৫৯টি, অ্যাসিডে ঝলসে যান ৭৪ জন। ২০১৫ সালে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে ৫৯টি, অ্যাসিডে আহত হন ৭৪ জন। ২০১৬ সালে অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয় ৪৪ জনের ওপর, আর এ বছর এতে আহত হন ৫০ জন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে অ্যাসিড নিক্ষেপ হয় ৩৮ জনের ওপর, আর অ্যাসিডে পুড়ে যান ৪৭ জন। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর প্রকাশিত ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের দেওয়া পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য-সংখ্যক নারী ছাড়াও অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে পুরুষ, মেয়েশিশু ও ছেলেশিশুদের ওপর। এই সময়ে ১৬৮ জন নারী অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন। এর বাইরে ৪৩ জন পুরুষ, ৩৬ জন মেয়েশিশু এবং ১১ জন ছেলেশিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসে আহত হয়।  চলতি বছর জানুয়ারি মাসেও দুজন অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন। এর মধ্যে একজন নারী ও একজন শিশু। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের ধামুরা গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইতি আক্তার ২০ জানুয়ারি স্থানীয় বখাটে মনির খানের ছুড়ে দেওয়া অ্যাসিডে গুরুতর আহত হয়ে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হন। এই নারীদের বয়স সাধারণত ১৩ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি ও পূর্বশত্রুতার জেরে পুরুষরাও অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। আর ভুক্তভোগীদের চার ভাগের এক ভাগ শিশু। এ ক্ষেত্রে শিশুরা মায়ের কাছাকাছি থাকায় তারাও অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, নারী ও মেয়েশিশুদের মধ্যে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ১০ শতাংশ, শত্রুতার কারণে ৫ শতাংশ এবং যৌতুক ও স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি না দেওয়ায় ৪ শতাংশ নারী অ্যাসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে দেশের অ্যাসিড হামলার ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারি, অ্যাসিড-সন্ত্রাসের হার অস্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এটি কখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার কখনো কমছে। তবে আগে নারীদের ওপর হামলার হার বেশি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রতিহিংসামূলকভাবে অ্যাসিড হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যে অভিভাবকদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে থাকা শিশুরাও অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে।’ তিনি বলেন, অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া ব্যক্তির চামড়া কখনোই শতভাগ ভালো হয়ে ওঠে না। আর এ ক্ষতি সেরে উঠতেও সময় লাগে।

সর্বশেষ খবর