রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনী বছরের আর্থিক পরিকল্পনা জানতে চায় আইএমএফ

রোহিঙ্গা ও ভ্যাট ইস্যুতে প্রশ্ন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চলতি বছরের শেষের দিকেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী জুনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট ঘোষণা করবে। ওই বাজেট ঘিরে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। শুধু তাই নয়, চলতি অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেট কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, উন্নয়ন বাজেটের অবস্থাই বা কী তা-ও জানাতে হবে। প্রশ্ন রয়েছে সংশোধিত বাজেটের আকার নিয়েও। রাজস্ব পরিকল্পনার পুরো কাঠামো সম্পর্কে অবহিত হতে চায় আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন স্থগিত করে দেওয়ায় এটি রাজস্ব আয়ে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। প্রশ্ন করেছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও। আইএমএফ জানতে চায়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ঘোষিত ও সংশোধিত বাজেটে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে?

বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এমন একগুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে আজ থেকে ঢাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করতে যাচ্ছে আইএমএফ। সংস্থাটির ‘আর্টিকেল ফোর মিশন’ নামে একটি প্রতিনিধি দল ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুসলিম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আইএমএফের (আর্টিকেল ফোর) মিশন প্রতি বছরই বাংলাদেশের আর্থিক খাত পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন দেয়। এটি তাদের নিয়মিত কার্যক্রম। এরই অংশ হিসেবে এবারও তারা আমাদের আর্থিক খাত বিশেষ করে সামষ্টিক অর্থনীতি সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন জানতে চেয়েছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচক রয়েছে জানিয়ে অর্থ সচিব বলেন, গতবারের চেয়ে আমাদের রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভ্যাট আইন ও রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে আইএমএফের প্রশ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে সচিব জানান, ভ্যাট আইনটি আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকার দুই বছর সময় নিয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়েই আইনটি বাস্তবায়ন করতে চাই। আর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি সই হয়েছে। ফলে মূল বাজেটে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।

নির্বাচনী বছরে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের কারণে বাজেটে সুদ বাবদ ব্যয় কতটা বাড়বে তাও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। জানতে চেয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি সম্পর্কেও। ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের প্রসার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশে এ ধরনের মুদ্রা লেনদেন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন করেছে আইএমএফ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে আমানত সংকটে পড়েছে সেটিও নজরে পড়েছে আইএমএফের। ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে সুদের হারে কী ধরনের পরিবর্তন আনছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শ্রেণিকৃত ঋণ বাড়ার পেছনের মূল কারণটি সম্পর্কেও অবহিত হতে চায় সংস্থাটি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদের হার এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে সরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় বেশি সুদ দিচ্ছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ সদস্য দেশগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করে থাকে। বাংলাদেশেও সংস্থাটির আর্টিকেল ফোর মিশন এ কাজটি করে থাকে। আর অর্থনৈতিক পর্যালোচনার স্বার্থেই তারা বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চায়। প্রসঙ্গত, গত বছর মার্চে আইএমএফ (আর্টিকেল ফোর মিশন) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা শেষে এক প্রতিবেদনে বলেছিল, সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা ও ঋণ আদায় জোরদার করতে হবে। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার বিষয়টি মধ্য মেয়াদে বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে বাংলাদেশের জন্য। এ জন্য মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সামষ্টিক নীতি হালনাগাদের প্রয়োজন হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে চলছে। এ জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজন। রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছিল সংস্থাটি।

সর্বশেষ খবর