সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানসম্পন্ন-সময়োপযোগী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানসম্পন্ন-সময়োপযোগী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার কার্যালয়ের সম্মেলন কেন্দ্রে কৃতী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৫ ও ২০১৬’ তুলে দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বায়নের এই যুগে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। মানসম্পন্ন শিক্ষা, গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিই পারে সব প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সভ্যতাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে।

গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রদত্ত ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৫ ও ২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ইউজিসির উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ এ বছর ২৬৫ জন কৃতী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ব-স্ব অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর বা সিজিপিএ অর্জনের  স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালের জন্য ১২৪ জন এবং ২০১৬ সালের জন্য ১৪১ শিক্ষার্থী এই পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক বিজয়ীদের উদ্দেশে বলেন, এতগুলো ছেলেমেয়ে আমাদের কাছ থেকে স্বর্ণপদক পেল, অর্থাৎ কত মেধা আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে মেধাবী বলে আমি বিশ্বাস করি। শুধু এখানে মেধার বিকাশে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়ার দরকার। তিনি বলেন, আজকে ২৬৫ জনকে আমরা স্বর্ণপদক দিলাম। আমি সত্যই খুব আনন্দিত। আর ২০১৬ সালের বেলায় আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েদের সংখ্যাটা বেশ বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট সুবিধা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসেই আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ-১ মহাকাশে উেক্ষপণ করা হবে। আমরা স্যাটেলাইট যুগেও চলে যাচ্ছি। অর্থাৎ আমাদের আকাশ থেকে একেবারে সাগরের তলদেশ (নেভির জন্য সাবমেরিন) পর্যন্ত সব জায়গাতেই বাংলাদেশ বিচরণ করবে। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সেসব জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষা খাতে সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরাই প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিই। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি ও ৪৪টি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে দুটি নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে শিক্ষার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিই। এর ফলে মাত্র দুই বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮ লাভ করে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে। সাক্ষরতার হার কমে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে। ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করি। শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন বাজেটের ১০০ ভাগ এবং রাজস্ব বাজেটের ৯০ ভাগ প্রদান করে। তাই উচ্চশিক্ষা অন্যান্য দেশের মতো ব্যয়বহুল নয়। উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আইন’ পাস হয়েছে এবং শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। সরকারের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে গৃহীত নীতির কারণে বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় প্রায় ৩৩ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া পদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়া জাবিন লতা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

সর্বশেষ খবর