সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মশায় নাভিশ্বাস

জিন্নাতুন নূর

মশায় নাভিশ্বাস

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। অবস্থা এমনই যে, মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে দিনের বেলাতেও মশারি টাঙ্গিয়ে রাখতে হচ্ছে। আবার তীব্র কটুযুক্ত কয়েল জ্বালিয়েও মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে নগরবাসী আগে যেখানে সন্ধ্যার আগে আগে দরজা-জানালা বন্ধ করতেন এখন তারা দিনের বেলাও প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খুলছেন না। মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট প্রতি বছর বৃদ্ধি পেলেও এর সুফল নগরবাসী পাচ্ছেন না। এমনকি মশা নিয়ন্ত্রণে মশক নিবারণী দফতরের স্বল্প জনবল এবং এই দফতরের কার্যক্রম নিয়েও আছে যথেষ্ট দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ার কারণে সিটি করপোরেশনের কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে তা ক্রয় করতেও লাগছে যথেষ্ট সময়। আর আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, নগরবাসী যখন মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ তখন চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ক্রয় করা হয়নি উত্তর সিটি করপোরেশনের মশক নিধন যন্ত্রপাতি।

মশক নিবারণী দফতরে স্থানীয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পদ ৩৯৬টি হলেও বর্তমানে সেখানে পূরণকৃত পদে আছে ২৯১ জন। এদের বেশিরভাগ আবার বয়স্ক কর্মী। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মশক নিধন কর্মীর সংখ্যা আড়াইশ থেকে ৩০০। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৫টি অঞ্চলে মশা নিধনের জন্য আছে ৩০০ জন কর্মী। ঢাকার জনসংখ্যা ও এলাকা অনুপাতে এই জনবল অত্যন্ত সীমিত। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুইবেলা সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে কোনো মশক নিধন কর্মীর দেখা না পেলেও অনেকদিন পর পর কোনো কোনো এলাকায় বিকালের দিকে নিধন কর্মীদের ফগিং মেশিন নিয়ে আসতে দেখা যায়। 

এই অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হারিয়ে নগরবাসী এখন শুধু সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে না থেকে বেসরকারি বিভিন্ন মশক নিধন প্রতিষ্ঠানের সেবার দিকে ঝুঁকছেন। ব্যক্তিগত ঘর-বাড়ি ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা নিচ্ছেন।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সাধারনত মশক নিধন কর্মীরা সকালে হাতে ওষুধ স্প্রে করেন। আর এ সময় নিঃশব্দে ওষুধ ছিটানোয় মানুষ তা টের পাননা। কিন্তু বিকেলে ফগিং মেশিনে ওষুধ ছিটানোয় শব্দ হওয়ায় মশক নিধন কর্মীদের কার্যক্রম মানুষের চোখে পড়ে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের সাত থেকে আটজন করে কর্মী মশা মারতে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও তারা জানান।

এই অর্থবছরে মশা নিধনে ডিএসসিসির বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ২৫ কোটি আর ডিএনসিসিতে ২০ কোটি। উল্লেখ্য, মশক নিধন কার্যক্রমের সঙ্গে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাও সম্পৃক্ত। কাউন্সিলররা তাদের চাহিদামত নিজ নিজ ওয়ার্ডে ওষুধ নিয়ে এর তত্ত্বাবধান করেন। কিন্তু নগরবাসীর প্রশ্ন কাউন্সিলররা যদি ওষুধ নিয়েই থাকেন তবে  সেই ওষুধ কোথায় যায়!

মশা নিধনের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রুটিন কার্যক্রম ছাড়াও বর্তমানে ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি এলাকায় প্রয়োজনে দিনে দুইবার করেও মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। হাতের স্প্রে মেশিন এবং ফগিং মেশিনের সাহায্যে এসব এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। চলতি মাসের ১২ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থা চলমান আছে। তবে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ বিশেষ এই কার্যক্রম আগামী মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত চালিয়ে যাবে বলে জানা যায়। তবে ডিএসসিসি এলাকাতে কোনো বিশেষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা যায়নি।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও এর সুফল নগরবাসী তখনই পাবেন যখন মশার উৎপত্তিস্থল ঠিকমতো পরিষ্কার করা হবে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল, নর্দমা, ডোবা অপরিষ্কার থাকায় এবং জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় সেখানে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই মশা নিধন করতে হবে। তিনি আরও জানান, মশা নিধনের ক্ষেত্রে কিছুটা জনবল সংকট আছে তবে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের মশক নিধনে ব্যবহৃত বেশ কিছু মেশিন নষ্ট আছে বলেও ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাহউদ্দিন বলেন, মশক নিধনের জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সারা বছরব্যাপী কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর