শিরোনাম
শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোনা পাচারে নিরাপদ রুট বুড়িমারী

স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন হচ্ছে পাচার, তল্লাশি চলে সেই এনালগ সিস্টেমে

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

সোনা পাচারে নিরাপদ রুট বুড়িমারী

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বুড়িমারী স্থলবন্দর এখন সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। স্থলবন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উেকাচ বাণিজ্যের কারণেই সোনা চোরাকারবারিরা অনায়াসে বন্দর পেরিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে যেতেন। সম্প্রতি দুই ভারতীয় নাগরিক বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ওপারে গিয়ে সোনা নিয়ে ধরা পড়ার ঘটনায় সেই আশঙ্কা আরও জোরালো হয়ে উঠছে। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে প্রথমে দেড় কেজি ও পরে দুই কেজি সোনার চালানসহ তাদের আটক করেন ভারতীয় শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে ওই দুই ভারতীয় নাগরিক বুড়িমারী স্থলবন্দর শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে বুড়িমারী পাড়ি দিয়েছেন তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠছে। এখানেই থেমে নেই গাফিলতি; গত বছরের এপ্রিল ও জুনেও দুই দফা সোনা পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে সোনার বার নিয়ে বুড়িমারী পাড়ি দিলেও ভারতের শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের আটক করেন। এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে সেই পুরনো পদ্ধতিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ ব্যবসায়ীদের শরীর ও লাগেজ তল্লাশি কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তারা। আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তল্লাশির ব্যবস্থা চালু করা হলে এমন সোনা চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর রাজকুমার নামে এক ভারতীয় নাগরিক প্রায় দেড় কেজি সোনা নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর পাড়ি দেন। কিন্তু ওপারে গিয়ে ভারতের চেংড়াবান্ধা স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তার হাতে ওই সোনাসহ আটক হন তিনি। এর আগে ২১ নভেম্বর ভারতের কোচবিহারের রতনকুমার কর্মকার দুই কেজি সোনার বার নিয়ে ধরা পড়েন সেখানে। তিনিও বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে সোনা পাচারকারী দুই ভারতীয় আটকের ঘটনায় বুড়িমারী স্থলবন্দরজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। স্থলবন্দরের কাস্টমস সহকারী কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে আগের পদ্ধতিতেই যাত্রীসহ দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের শরীর তল্লাশি করা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতির স্ক্যানযন্ত্র, মেটাল ডিটেক্টরসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে এ ধরনের চোরাচালান প্রতিরোধ করা সম্ভব।

স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, বুড়িমারীর শূন্যরেখার ওপারে ভারতের চেংড়াবান্ধা স্থলবন্দর। সেই শূন্যরেখার পাঁচ গজের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে একটি ছোট্ট টিনের ছাউনি ঘরে বসে পাসপোর্ট যাত্রীদের মালামালসহ শরীর তল্লাশি করছেন বুড়িমারী কাস্টমসের কর্মকর্তারা। তবে সেখানে যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের শরীর বা লাগেজ তল্লাশির জন্য নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি। এ ছাড়া যেসব কাস্টমস কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের পরনেও নেই কোনো ইউনিফর্ম। ফলে স্থলবন্দরে কে কাস্টমসের কর্মকর্তা, আর কে বা যাত্রী তা দেখে বোঝার উপায় নেই। তবে স্থলবন্দরে কর্মরত বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) সদস্যদের সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করতে দেখা গেছে। বুড়িমারীতে কর্মরত সরকারের একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি থেকে সোনা পাচারকারীরা নিরাপদ রুট হিসেবে এই বন্দর ব্যবহার করছে। এ বিষয়টি স্থলবন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। বুড়িমারী পুলিশ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাসপোর্ট যাত্রীদের শরীর কিংবা লাগেজ তল্লাশির বিষয়টি মূলত কাস্টমস কর্মকর্তারা দেখভাল করেন। আমরা শুধু ইমিগ্রেশন পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিষয়টি দেখি।’

বুড়িমারী স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি ভারতের শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাতে সোনার বারসহ দুজন আটকের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এর আগেও সোনার বার নিয়ে নির্বিঘ্নে বুড়িমারী পাড়ি দিয়েছেন একাধিক পাচারকারী— এমন তথ্য অতিসম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি।’

সর্বশেষ খবর