শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

লালনে মাতোয়ারা ছেঁউড়িয়া

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

লালনে মাতোয়ারা ছেঁউড়িয়া

কেউ কলার পাতায়, কেউ থালায় ভাত, ডাল ও মাছ নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু কেউ খাবার মুখে তুলছেন না। বেলা সাড়ে ১২টায় লালন আখড়া বাড়ির আঙিনায় সারিবদ্ধভাবে বসে থাকা হাজার হাজার বাউলের মধ্যে খাবার পরিবেশন শুরু হয়। অগণিত বাউলের মধ্যে খাবার পরিবেশন শেষ হতে তখন বেলা গড়িয়ে প্রায় আড়াইটা। সবাইকে খাবার পরিবেশন শেষ হলে লালন মাজারের খাদেম মাইকে উচ্চারণ           করলেন, ‘আল্লাহ আলেক’। তখন সবাই একসঙ্গে খাবার মুখে তুললেন। গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় মরমি সাধক লালন সাঁইয়ের আখড়া বাড়িতে আয়োজিত দোল উৎসবে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। আত্মসংযোগ হয়তো কেবল লালন ভক্ত নির্লোভ এই সহজ-সরল মানুষগুলোর পক্ষেই সম্ভব। গত বৃহস্পতিবার থেকে বাউল সাধু বৈষ্ণবদের মেলা বসেছে লালনধামে। ধর্ম-বর্ণ-জাতপাত ভুলে তারা গাইছেন মানুষের জয়গান। আখড়া বাড়িতে সুদূর ফ্রান্স থেকে এসেছেন তরুণী দেবোরা। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়াই দেশে দেশে। তবে কীভাবে তাঁকে পাব বুঝতে পারিছলাম না। শেষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়া বাড়ি এসে আত্মশুদ্ধির পথ খুঁজে পেলাম। জানতে পারলাম সহজ-সরল মানুষ হতে হবে, মানুষকে ভজতে হবে, ভালোবাসতে হবে। তবেই মিলবে ঈশ্বরের সন্ধান। এরপরই লালন সাঁইয়ের গুরুবাদী ধর্মে দীক্ষিত হলাম’।

ফরিদপুরের বাউল নিজাম শাহ বলেন, ‘চোখে দেখা মানুষকে যদি ভালোবাসতে না পারি তবে অদেখা আল্লাহকে ভালোবাসব কী করে। মানুষকে ভালোবাসলেই খোদার দেখা মিলবে। তাই তো সাঁইজির পথে দীক্ষা নিয়েছি।’ আরেক বাউল হরিপদ দাস বলেন, ‘আজকের সমাজ ব্যবস্থায় হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি মারামারি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু লালন অনুসারীরা আজও এসব থেকে নিজেদের সংযত রাখতে পেরেছেন। তারা কারও মাথায় লাঠি মারেন না, কোনো অনৈতিক কাজেও জড়ান না। এর মূলে রয়েছে লালনের মানবতাবাদী দর্শন। তাই সাঁইজির জীবনাদর্শ আমাদের এই ঘুণে ধরা সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। আজ শেষ হবে তিন দিনের এই মিলনমেলা। যার যার ঠিকানায় ফিরে যাবেন বাউলরা। আর দিন গুনতে থাকবেন আগামী দোল উৎসবের।

সর্বশেষ খবর